রোজা ভঙ্গের বৈধ কারণগুলো
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজা সম্পর্কে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন এটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রমজানের রোজা নিয়ে এক হাদিসে হজরত তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন—
একজন অগোছালো চুলের গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ আমার ওপর কত ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন? তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ; তবে তুমি চাইলে নফল পড়তে পারো।
তারপর তিনি জানতে চাইলেন, আমার ওপর কত রোজা ফরজ করা হয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমজানের রোজা ফরজ; তবে চাইলে অতিরিক্ত নফল রাখতে পারো। এরপর তিনি জানতে চাইলেন, আমার জন্য কত পরিমাণ জাকাত ফরজ? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের এই বিধানগুলো ব্যাখ্যা করলেন।
তারপর তিনি বললেন, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমি এসবের বাইরে কিছু বাড়াবও না, কমাবও না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে সত্য কথা বলে থাকে, তবে সে সফল হলো, অথবা বলেছেন, সে জান্নাত লাভ করবে। (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৭৭১)
প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য রমজানের রোজা পালন করা ফরজ।
কোনো বৈধ কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করা বা না রাখা হারাম। তবে শরীয়ত কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে রোজা ভঙ্গের অনুমতি দিয়েছে এবং পরবর্তীতে কাজা করতে হবে। এ ধরনের নয়টি কারণ নিম্নে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হলো—
১. সফর (ভ্রমণ)
যদি কেউ শরয়ী সফরে থাকে, তবে তার জন্য রোজা না রাখা বা ভেঙে ফেলা বৈধ। পরবর্তী সময়ে কাজা করতে হবে। তবে কষ্ট না হলে রোজা রাখাই উত্তম।
২. গুরুতর অসুস্থতা
যদি কেউ এমন অসুস্থ হয় যে রোজা রাখলে রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, কিংবা জীবনহানি বা অঙ্গহানির সম্ভাবনা থাকে, তবে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে সুস্থ হলে কাজা আদায় করতে হবে, কাফফারা লাগবে না।
৩ ও ৪. গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মা
গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী মা যদি নিজের বা সন্তানের জন্য শঙ্কিত হন, তবে রোজা না রাখা বা ভেঙে ফেলা বৈধ। সুস্থ হলে কাজা করতে হবে, তবে কাফফারা দিতে হবে না।
৫ ও ৬. চরম ক্ষুধা ও তৃষ্ণা
যদি পানাহার না করার কারণে জীবনহানির বা মানসিক ভারসাম্য হারানোর আশঙ্কা হয়, তবে রোজা ভেঙে ফেলা বৈধ। পরে কাজা করতে হবে, তবে কাফফারা নেই।
৭. জীবনহানি বা মানসিক ভারসাম্য হারানোর ভয়
যদি কোনো বিষাক্ত প্রাণীর দংশন বা অন্য কারণে জীবনহানি বা পাগল হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে রোজা ভঙ্গ করা বৈধ। পরে কাজা করতে হবে, তবে কাফফারা লাগবে না।
৮. জিহাদ
যদি কোনো মুজাহিদ নিশ্চিত জানেন যে যুদ্ধ করতে হবে এবং রোজার কারণে দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন, তবে রোজা ভাঙা বৈধ। পরে কাজা আদায় করতে হবে, তবে কাফফারা নেই।
৯. জোরপূর্বক খাওয়ানো
যদি কেউ বাধ্য হয়ে রোজা ভাঙতে হয় এবং না খেলে প্রাণনাশ, অঙ্গহানি বা গুরুতর শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে রোজা ভেঙে ফেলা বৈধ। তবে যদি ধৈর্যধারণ করে, তবে সে আল্লাহর কাছে পুরস্কার লাভ করবে।
শাকিল/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta