ইসলামে আল্লাহর হক ও বান্দার হক পরিপালন
ইসলাম মানবাধিকারের ক্ষেত্রকে এতটাই বিস্তৃত করেছে যে তা জীবনের প্রতিটি দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। পিতা-মাতার অধিকার, বন্ধু-বান্ধবের অধিকার, শ্রমিক ও মালিকের অধিকার, শাসক ও জনগণের অধিকার, সরকারের অধিকার, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, অসহায়দের অধিকারসহ সমাজের প্রতিটি স্তরের অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, বান্দার হক ও আল্লাহর হক পরিপালন করাই ইসলামের মূল শিক্ষা।
ইসলাম অধিকার আদায়ের চেয়ে অধিকার প্রদানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে অন্যের হক সংরক্ষণের প্রবণতা সৃষ্টি করে, কারণ কেয়ামতের দিন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।
ইসলাম প্রথম থেকেই মানবজাতির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলামে প্রদত্ত মানবাধিকার আল্লাহ প্রদত্ত, যা পৃথিবীর কেউ রহিত করতে পারে না।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে শ্রেষ্ঠ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি (সুরা আত-তিন : ৩)।’
আরও বলা হয়েছে, ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বাছাই করা হয়েছে মানব কল্যাণের জন্য (সুরা আলে ইমরান : ১১০)।’
মানবসমতার ভিত্তি সম্পর্কেও কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মানবজাতি, আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি (সুরা হুজরাত : ১৩)।’
ইসলামের শান্তির বার্তা শুধুমাত্র নিজ ধর্মাবলম্বীদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং পরধর্মের প্রতি সহনশীলতা ও সহমর্মিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের জন্য ৬২৪ হিজরিতে গৃহীত ‘মদিনা সনদ’ মানবাধিকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
আধুনিক সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অথচ ১৪০০ বছর আগে কোরআনে এগুলোর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে, রিজিকের প্রকৃত মালিক আল্লাহ, তবে মানুষের কর্তব্য তা অন্বেষণ করা এবং সমাজের দায়িত্ব হল সহযোগিতা করা।
মানবাধিকারের বিষয়ে কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। যেমন-
খাদ্য : আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জীবিকার দায়িত্ব আমি নিয়েছি (সুরা হুদ : ৬)।’
বস্ত্র : ‘হে বনি আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাক সৃষ্টি করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং এটি সাজসজ্জার বস্তু, তবে পরহেজগারির পোশাকই উত্তম (সুরা আরাফ : ২৬)।’
বাসস্থান : ‘আমি তোমাদের জন্য ঘরকে আশ্রয়স্থল করেছি এবং তোমাদের জন্য পশুর চামড়া দিয়ে তাঁবুর ব্যবস্থা করেছি (সুরা আন-নাহল : ৮০)।’
শিক্ষা : ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন (সুরা আলাক : ১-২)।’
চিকিৎসা : ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করেছি, যা রোগের জন্য ওষুধ এবং মুমিনদের জন্য রহমত (সুরা বনি ইসরাইল : ৮২)।’
রসুল (সা.) চিকিৎসা সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জয়তুনের তেল ব্যবহার কর, এটি কল্যাণকর বৃক্ষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাসে তিন দিন সকালে মধু গ্রহণ করবে, সে কঠিন ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকবে (ইবনে মাজাহ)।’ কালিজিরা, আদা, খেজুর, দুধ ইত্যাদির উপকারিতাও তিনি উল্লেখ করেছেন।
নারীর অধিকার : জাহেলি যুগে কন্যাসন্তানকে অভিশাপ মনে করে হত্যা করা হতো। কিন্তু রসুল (সা.) ঘোষণা করেন, কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের প্রতীক। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কন্যাসন্তানকে ভালোভাবে লালনপালন করবে, সে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে (বুখারি ও মুসলিম)।’
সামাজিক কল্যাণ : সম্প্রদায়গত বিভেদ, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও বিদ্বেষ দূর করতে রসুল (সা.) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta