পাপ পরিহারের সহজ উপায়
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পাপ ও পুণ্যের অনুভূতি বিদ্যমান। পুণ্য ব্যক্তির ঈমানকে দৃঢ় করে এবং মুক্তির পথে এগিয়ে নেয়, অন্যদিকে পাপ আত্মাকে কলুষিত করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। পাপকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
এক. নাওয়াস ইবনে সামআন আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন, পুণ্য হলো উত্তম চরিত্র। আর পাপ হলো যা তোমার অন্তরে সংশয় তৈরি করে এবং অন্যরা তা জানুক তুমি তা অপছন্দ করো। (মুসলিম, হাদিস : ৬২৮৫)।
দুই. আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘যে কাজকে মুমিন ভালো মনে করে, তা আল্লাহর কাছেও ভালো এবং যা মুমিন মন্দ মনে করে, তা আল্লাহর কাছেও মন্দ।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস : ১৮১৬)।
কোন কাজ প্রশংসনীয় আর কোনটি নিন্দনীয় তা হৃদয়ের অনুভূতিতেই প্রতিফলিত হয়। তবুও অধিকাংশ মানুষ সেই অনুভূতির তোয়াক্কা করে না এবং নিজেদের ইচ্ছার দাসত্ব করে। ফলে তারা গুনাহগারে পরিণত হয়।
পাপ বর্জনের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য পাপ এড়িয়ে চলো এবং গোপন পাপ থেকেও বিরত থাকো। নিশ্চয় যারা পাপ করে তাদের দ্রুতই শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২০)।
ছোট-বড় পাপ
কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে পাপকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: কবিরা (বড়) ও সগিরা (ছোট)। তবে ছোট পাপকে তুচ্ছ ভাবার সুযোগ নেই। কিয়ামতের দিনে প্রত্যেকটি পাপের জন্য হিসাব দিতে হবে।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ সৎকর্ম করবে, সে তার প্রতিদান পাবে, এবং যে অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সে-ও তার প্রতিফল পাবে।’ (সুরা : জিলজাল, আয়াত : ৭-৮)।
যদি ছোট পাপকে অবহেলা করা হয়, তবে তা একসময় পাহাড়ের মতো বিশাল হয়ে যেতে পারে।
দুনিয়ায় পাপের শাস্তি
পাপের শাস্তি কেবল আখিরাতেই সীমাবদ্ধ নয়, কিছু কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতেও হয়ে থাকে। এসব শাস্তির উদ্দেশ্য মানুষকে সতর্ক করা, যাতে তারা ফিরে আসে। কোরআনে এসেছে, ‘আমি তাদের পরকালের মহাশাস্তির আগে কিছু লঘু শাস্তি (দুনিয়ায়) প্রদান করব, যাতে তারা সতর্ক হয়।’ (সুরা : সিজদা, আয়াত : ২১)।
এই শাস্তি কখনো জাতিগতভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আবার কখনো ব্যক্তিগত জীবনে রোগব্যাধি, প্রিয়জন হারানো, দুর্ঘটনা কিংবা ব্যর্থতা হিসেবে দেখা দেয়।
পাপ বর্জনের সহজ উপায়
হঠাৎ করেই সকল গুনাহ পরিত্যাগ করা কঠিন হতে পারে। এজন্য ধৈর্য ও প্রচেষ্টা দরকার। নিয়মিত চেষ্টা ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য আসে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা আমার পথে কঠোর সাধনা করে, আমি তাদের আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)।
মানসিক দৃঢ়তা বজায় রেখে চেষ্টা করলেই পাপের পথ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও অধিক প্রিয়। সকলের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। যা তোমার জন্য উপকারী, তার প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম হয়ে থেকো না। যদি কোনো বিপদ আসে, তবে বলবে না “যদি আমি এমন করতাম, তবে এমন হতো।” বরং বলবে, “আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, সেটাই ঘটেছে।” কেননা, ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের পথ খুলে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৩২)।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta