মহাকাশ স্টেশনে নামাজ ও রোজা করার প্রক্রিয়া
চাঁদে মানুষের পদার্পণ অনেক আগেই হয়েছে। এখন মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সম্প্রতি অনেক মুসলিমও মহাশূন্যে সফর করছেন। তাই প্রশ্ন ওঠে, মুসলিমরা যদি মহাশূন্যে যান, তাঁদের নামাজ-রোজা ও অন্যান্য ইবাদত পালনের নিয়ম কী হবে এবং এগুলো কিভাবে আদায় করবেন? বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেও বিভিন্ন দেশের মুসলিম মহাকাশচারীরা অবস্থান করছেন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এটি ১৫টি দেশের যৌথ প্রকল্প, যেখানে মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তির কাজ হয়। প্রতি ৯০ মিনিটে এটি পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। ফলে সেখানে দিনে ১৬-১৮ বার সূর্য ওঠানামা করে, এবং দিন-রাতের ধারণা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে, মহাকাশচারীরা কিভাবে নামাজ পড়বেন ও রোজা রাখবেন?
নামাজ-রোজা আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে মুফতিরা কয়েকটি উপায় পরামর্শ দিয়েছেন—
১. মহাকাশচারীরা যে স্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছেন, সেই অঞ্চলের সময় অনুযায়ী নামাজ-রোজা পালন করবেন।
২. পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাভাবিক সময়ের হিসেব অনুযায়ী ইবাদত করবেন।
৩. মক্কা শরিফের সময় অনুযায়ী ইবাদত পালন করাও যথেষ্ট।
এই পদ্ধতিগুলোর ভিত্তি হিসেবে মুফতিরা দাজ্জাল সংক্রান্ত হাদিসটি উল্লেখ করেন, যেখানে অস্বাভাবিক দিনগুলোর নামাজের নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।
সাহাবি নাউয়াস ইবনে সামআন (রা.)-এর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন যে, দাজ্জাল পৃথিবীতে ৪০ দিন থাকবে, প্রথম দিন এক বছর সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাস সমান এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহ সমান হবে, বাকি দিনগুলো সাধারণ হবে। সাহাবীরা প্রশ্ন করেছিলেন, ওই বিশেষ দিনে নামাজের পদ্ধতি কী হবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘না, এক বছরের নামাজই পূর্ণভাবে আদায় করতে হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৩৭)
তারা মুসাফির হওয়ার কারণে সফরের নামাজ পড়বেন এবং রোজার ক্ষেত্রে মুসাফিরদের সুবিধা থাকবে, অর্থাৎ রোজা না রেখে পরে কাজা করতে পারবে।
কিবলা নিরূপণ পদ্ধতি
মহাকাশচারীদের কিবলা নিয়ে শরিয়তের দৃষ্টিতে কাবা শরিফের চার দেয়ালই কিবলা, তবে মহাশূন্যে কাবার সোজা বরাবরও কিবলা হিসেবে গণ্য হবে।
তাহলে মহাকাশ স্টেশন থেকে যদি পৃথিবী দেখা যায়, তাহলে পৃথিবীর দিক কিবলা হবে। তারা পৃথিবীর সেই অংশের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে পারবেন, যেখানে কাবা শরিফ অবস্থিত। (ফালাকিয়াতে জাদিদা, পৃষ্ঠা-২০৭)
যদি পৃথিবী থেকে দূরে থাকার কারণে কিবলা নির্ধারণ অসম্ভব হয়, তবে অনুমান করে যে দিকেও মুখ করে নামাজ পড়লেই হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘পূর্ব-পশ্চিম সকল দিক আল্লাহরই, তোমরা যেদিকে মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ তাআলা রয়েছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১১৫)
একবার সাহাবীরা সফরে যাওয়ার সময় দিক হারিয়ে ফেললে, তারা নিজস্ব অনুমান অনুযায়ী নামাজ পড়েন। পরে নবীজি (সা.)-কে জানালে, তিনি তাদের নামাজ ভুল বলে গণ্য করেননি। (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস : ১০৬২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৪৩)
বিডি প্রতিদিন/মুসা
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta