৪ আগস্ট লামিমের চোখে গুলি লাগে: তাসনিম জারা
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কেন্দ্রীয় নেতারা সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনসংযোগ শুরু করেছেন। তারা জেলা ভিত্তিক মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন এবং তাদের প্রত্যাশা মনোযোগ দিয়ে গ্রহণ করছেন। এই সভাগুলোতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তাসনিম জারাও উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার তারা ঠাকুরগাঁওয়ে এক সভা করছিলেন। সেখানে ১৫ বছর বয়সী কিশোর লামিম, যিনি আন্দোলনের সময় চোখ হারিয়েছেন, তার দেশের প্রতি ভাবনা ব্যক্ত করেন।
ডা. তাসনিম জারা শুক্রবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লামিমকে নিয়ে আবেগঘন একটি পোস্ট করেছেন।
পোস্টে তিনি বলেন, ‘লামিম মাত্র ১৫ বছর বয়সী। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। গত বছর সে ওই এলাকায় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।’
‘আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেন আন্দোলনে গিয়েছিলে? তোমার সঙ্গে কেউ ছিল? সে বলল, না, একাই গিয়েছিলাম।’
জারা লেখেন, ‘আমার প্রশ্নে সে বলল, বড় ভাইয়ের ফোন আর টেলিভিশনে আন্দোলনের দৃশ্য দেখছিলাম। দেখছিলাম কিভাবে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে মিলে তাদেরকে পেছনে ধাওয়া করে ও মারধর করে। তখন ভেতর থেকে একটা অনুভূতি জাগল, যা আমাকে তাদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য করল।’
‘বাবা-মা আমাকে রাস্তায় নামতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু ৪ আগস্ট আমি মা-বাবাকে বলেছিলাম ফুটবল খেলতে যাবো এবং আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। সারা দিন সেখানে ছিলাম। বিকেলের দিকে আমার বাম চোখে গুলি লাগে।’
জারা আরও লেখেন, ‘লামিমের বাম চোখ দিয়ে আর দেখার ক্ষমতা নেই। সে বলল অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এখন জানি না কী হবে। মনোযোগ দিতে পারছি না ঠিকমতো।’
‘আমি জানতে চেয়েছিলাম, দেশের জন্য তার আকাঙ্ক্ষা কী। লামিম বলল, আমি চাই আমাদের দেশ সুন্দর হোক, কোনো দুর্নীতি বা চুরি-বাটপারি না থাকে। সে পনেরো বছর বয়সী একটি ছেলে, যার চোখ রাষ্ট্র কেড়ে নিয়েছে। তার একটাই দাবি, একটি সৎ দেশ গড়ে তোলা হোক।’
জারা বলেন, ‘এই সরল কথা থেকেই বোঝা যায় সংস্কারের চাওয়া। এমন একটি দেশ যেখানে নাগরিকরা তাদের অধিকার পেতে ঘুষ দিতে হবে না। যেখানে পনেরো বছরের শিশু-কিশোরেরা নিজেদের বিকাশের সুযোগ পাবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের চোখ নেবে না।’
শেষে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্ম খুবই সচেতন। অনেকেই বুঝতে পারছেন না এই প্রজন্মের ভিতরে কত বড় পরিবর্তন এসেছে। তারা ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে জানে এবং সরাসরি সেটি প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না। তাদের মধ্যে একটা নির্মল স্বচ্ছতা রয়েছে, যা মিথ্যা ও ভয় দ্বারা বিকৃত হয়নি। তাই তারা প্রথম প্রতিবাদ করে এবং প্রথমে কথা বলে। তাদের সাহসের মতোই সাহসী একটি দেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে কিনা, এটাই এখন আমাদের প্রশ্ন।’
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta