বইমেলা: একদিন
মামা হাসি দিয়ে বললেন, হ্যাঁ দেব! অনেক বই কিনে দেব। এরপর রুমু মামার সঙ্গে নতুন বইয়ের সুবাসে খুশিতে-খুশিতে বাড়ি ফিরল। বইমেলায় গিয়ে রুমুর খুব ভালো লেগেছে। এতটাই ভালো লাগল যে, সেটা তার ছোট্ট হৃদয়ে চিরকাল ধরে থাকবে!
বইমেলা চলছেই। নতুন বইয়ের গন্ধে চারপাশ ভরে উঠেছে। স্টলগুলো নানা রঙে সাজানো। ছোট্ট রুমু আজ খুবই আনন্দিত। কারণ আজ সে মামার সঙ্গে বইমেলায় যাবে। সেখানে রুমু রাজকুমারীর গল্পের বই কিনবে। রাজকুমারীর গল্প পড়তে পড়তে সে নিজেও একদিন রাজকুমারী হয়ে যাবে!
কিন্তু মামা এখনো ঘুম থেকে উঠছেন না কেন। ছোট্ট রুমু সকাল থেকেই প্রস্তুত হয়ে বসে আছে। সে আর দেরি করতে পারছে না।
সে মামার রুমে গিয়ে তাকে ডাকতে লাগল। মামা! মামা! তুমি এখনও ঘুমাচ্ছো! তাড়াতাড়ি উঠো, বইমেলায় যেতে হবে তো। মামা রুমুর কথা শুনে প্রথমে ঘড়ির দিকে তাকালেন। তারপর তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দ্রুত প্রস্তুত হলেন। বললেন, আমাদের হাতে সময় কম, তিনটা আগে বইমেলায় পৌঁছাতে হবে। না হলে পথে প্রচুর ভিড় হবে।
মামার তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হওয়া দেখে ছোট্ট রুমু হাসতে লাগল।
রুমু বইমেলায় পৌঁছাতেই দেখল বিশাল একটি গেট। চারপাশে এতো মানুষের ভিড় যে, রুমুর চোখ কপালে! মামা রুমুকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন। মামা বললেন, দেখেছ রুমু! কী সুন্দর স্টলগুলো! আর হাজার হাজার বই সাজানো আছে। রুমু বলল, হ্যাঁ। কিন্তু আমার রাজকুমারীর বইটা কোথায়?
মামা বললেন, নিশ্চয়ই পাবে! আগে স্টলগুলো ঘুরে দেখি।
রুমু মামার সঙ্গে স্টলগুলোতে ঘুরে বেড়াল। সেখানে অনেক শিশুরা বই পড়ছে। কেউ কেউ বই কেনার আগে বইগুলো নিয়ে খেলছে।
হঠাৎ মামা রুমুকে একটি স্টলে নিয়ে গেলেন। সেখানে শিশুদের জন্য হাজার হাজার বই সাজানো ছিল। ছোটদের দেখে রুমু ভীষণ অবাক হলো। কিন্তু রুমুর কাঙ্ক্ষিত রাজকুমারীর গল্পের বই কোথায়?
হঠাৎ রুমুর চোখ পড়ল এক ডানাওয়ালা পরীর বইয়ের দিকে। সে বইটি হাতে তুলে নিল এবং এক মনোযোগে পড়তে লাগল। এক-দুই পৃষ্ঠা পড়ার পর রুমু যেন এক অজানা রাজ্যে প্রবেশ করল। সেখানে এক রাজকুমারী ছিল। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। একদিন পাখির পিঠে চড়ে অজানা মেঘের দেশে যেত। আকাশে উড়ে বেড়াত। বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখত।
মামা বললেন, রুমু! এখানে বই পড়ার জায়গা না। তুমি এগুলো বাসায় গিয়ে পড়বে। মামার কথা শুনে রুমু যেন স্বর্গের রাজ্য ছেড়ে পৃথিবীতে ফিরে এল। রুমু বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা রাজা, রানী আর রাজকুমারীর ছবিগুলো স্পর্শ করছিল। মামা রুমুর পছন্দ বুঝে আরও দশটি রাজকুমারীর গল্পের বই কিনে দিলেন। মামা বললেন, এখন তো খুশি?
রুমু অনেক রাজকুমারীর গল্পের বই পেয়ে খুব খুশি হলো। মামা ভাবলেন, এই প্রজন্মের শিশুরা সাধারণত বিজ্ঞান বা তথ্যপ্রযুক্তির বই পছন্দ করে, কিন্তু রুমু যেন সবথেকে আলাদা!
মামা ভাবলেন, হয়তো এই বিশেষত্বই একদিন রুমুকে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করবে। কারণ প্রতিটি শিশুর মন আগে থেকেই সাজানো থাকে, তার ভবিষ্যত কী হবে তা বুঝা যায় তার আচরণ থেকেই।
সন্ধ্যা হতে চলেছে। মামা বললেন, এখন বাসায় চলো রুমু। আমরা আবার বইমেলায় আসব। আজ শেষ দিন নয়, মাসব্যাপী চলবে বইমেলা।
রুমু বলল, সেদিনও কি তুমি আমাকে আরও রাজকুমারীর গল্পের বই কিনে দেবে?
মামা মুচকি হেসে বললেন, হ্যাঁ, অনেক বই কিনে দেব। তারপর রুমু মামার সাথে নতুন বইয়ের গন্ধে আনন্দে-আনন্দে বাসায় ফিরে এল। বইমেলায় গিয়ে রুমুর ভীষণ ভালো লেগেছে। এত ভালো লেগেছে যে, তা সারাজীবন তার ছোট্ট হৃদয়ে গেথে থাকবে!
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta