ফাগুনের রাতের পরী
পূর্ণিমার রাত। আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ হাসি দিয়ে উজ্জ্বল হচ্ছে। সাদা ফ্রক পরা বিন্দু ফুলের বাগানে ঘুরছে। হঠাৎ, সে দেখে পরীরা গান গাইতে গাইতে উড়ে যাচ্ছে। লাল পরী, নীল পরী, সবুজ পরী, হলুদ পরী, কমলা পরী, সোনালি পরী... কত রঙের পরী!!
বিন্দু রংবেরঙের পরী দেখে লাল পরীকে বলছে, দেখো, এই ফুল বাগানে একটি ছোট মেয়ে হাঁটছে। আমাদের মতোই সুন্দর।
-আরে ধ্যাত! কেন আমাদের মতো হতে যাবে? তাদের সৌন্দর্যের মধ্যে কৃত্রিমতা আছে। ঠিক যেমন ফুলের সৌন্দর্যের মাঝে কাঁটা থাকে, তেমনি তাদের সৌন্দর্যের মাঝে কিছু আছে যা আমাদের নেই। আমরা তো পবিত্র। দেখো, তারা বারবার আমাদের সৌন্দর্য সঙ্গে তুলনা করে।
-চল, যাওয়ার আগে একটু আনন্দ করি। নাচতে গাইতে পুরো রাতটাই সুন্দর করে তুলতে চাই।
-হ্যাঁ, চল!
পরীরা বিন্দুর ফুল বাগানে আসে।
বিন্দু অবাক হয়ে তাদের দেখে।
-শুভ রাত্রি, বিন্দু!!
-শুভ রাত্রি!! বিন্দু পেছনে ফিরে দেখে এক ঝাঁক পরী।
-তোমরা কেন এসেছো এখানে? বিন্দু জানতে চায়। -তুমি জানো না, এই বাগানে কাউকে ঢুকতে মানা। এটা আমার অনুমতি ছাড়া কেউ আসতে পারবে না। শুধু আমি একা এখানে থাকতে চাই।
-দুঃখিত। ভুল হয়ে গেছে, বিন্দু। আমরা এখন থেকে তোমার অনুমতি নিয়েই এখানে খেলতে আসব। তাহলে কি আমাদের সঙ্গে খেলতে পারো?
-হ্যাঁ, খেলতে পারো। বিন্দু সম্মতি দেয়। হুম, কি চাও এখানে?
-তোমার ফুল বাগানটা খুব সুন্দর। -সবুজ পরী বলে। এত ফুল ফুটেছে! আমাদের সবার জন্য একটি করে ফুল দেবে? তুমি আমাদের বন্ধু হবে?
-আমরা ফুল দিয়ে তোমাদের বন্ধুত্ব নিব না। যাও, এখান থেকে চলে যাও। এই ফুল কাউকেও দেব না। বিন্দু রেগে যায়।
-একটি ফুল দাও, প্লিজ।
-না, কোন ফুল পাবে না। বিন্দু চোখে চোখ রেখে কঠিন বলে। আর বেশি হলে তোমাদের ডানায় আগুন ধরিয়ে দেব। ভালোর জন্য চলে যাও।
পরীরা হতাশ হয়ে চলে যায়, একে অপরকে দেখে শোক জানায়।
-এটা কি হবে! বলে বিন্দু।
বিন্দু চোখ মুছে ফুল বাগান চারপাশে তাকায়। কিছুই দেখতে পায় না। হঠাৎ হাওয়ার দাপটে বাগানের সব আলো নিভে যায়। চাঁদ নেই, আলো নেই, পোকামাকড়ের ডাক নেই। ফুলগুলো দুলে যাচ্ছে, আগের মিষ্টি সুবাস নেই। আশ্চর্যজনকভাবে ফুলের রঙও বদলে যাচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে বিন্দুর। ভয়ে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। দীর্ঘ সময় পরে আস্তে আস্তে চোখ খোলে। সে দেখে, ফুলের একটিও বাকি নেই। পাতা ঝরে পড়েছে। জল চোখে আসে বিন্দুর। সে কাঁদে। এত কষ্টে গড়া ফুল বাগানে কোন ফুল নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ হাসে, তারাদের মুখে তিরস্কার।
-বিন্দু, তুমি কি এত খারাপ?
-দুচোখ মুছতে মুছতে বিন্দু নিজেই সান্ত্বনা দেয়। আমি আবার ফুল বাগান গড়ব। নতুন গাছ লাগাব। ফুল ফুটবে, আবার আমার বাগান সুগন্ধিতে ভরে উঠবে।
-কিন্তু কেমন করে?
তখনই, গাছের আড়ালে কারও চুপচাপ বসে থাকা দেখতে পায় বিন্দু।
-কে? কে আছে ওখানে?
-আমি। আমি লাল পরী।
-আমি সবুজ পরী।
-তোমরা আবার কেন এসেছো? বিন্দু জানতে চায়। আমাকে ছাই করে দেবে তাই না? করো, যা ইচ্ছে, করো। রাত গভীর হয়ে এসেছে। আমার বন্ধুরা ফুল নিয়ে স্মৃতিসৌধে যাবে। আমি যেতে পারব না।
-কেন? পরীরা জানতে চায়। তুমি জানো না কি?
-আমার বাগানে কোন ফুল নেই যে, শহীদদের স্মরণে ফুল দিতে পারি। অথচ স্মৃতিসৌধ ফুলে ফুলে সেজে থাকবে। বিন্দু মনে মনে কাঁদছে।
-তুমি জানো না, বিন্দু, আমরা তোমার কত উপকার করেছি।
-কিভাবে? বিন্দু চমকে উঠে। কমলা পরী বলে, একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমরা ফুল চুরি হতে রক্ষা করেছি।
তোমার বাগানে ফুল ছিল, কিন্তু আমরা তা নিরাপদ করেছি।
বিন্দুর চোখে আনন্দের ঝিলিক দেখা দেয়।
ফুল আবার ফুটে উঠল, পাতা গজাচ্ছে, গাছগুলো জীবন্ত হয়ে উঠছে। বাগানটি ফুলে ফুলে ভরে উঠছে। চাঁদের আলো ঝরে পড়ছে।
বিন্দু হাসছে, আনন্দে।
পরীদের সঙ্গে হাত ধরে নাচতে গাইতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আনন্দে সবাই মেতে ওঠে। রাতের চাঁদ হাসছে।
হঠাৎ বিন্দু মাথা ঠেকিয়ে বলে, মা, আব্বু কী করছে?
বিন্দু বাড়ি ফিরতে চায় না, খেলতে খেলতে সময় কেটে যাচ্ছে।
এত আনন্দে সে হঠাৎ পা মচকে পড়ে যায়।
-বিকট চিৎকার করে, মা, মায়ের কাছে!
মা ছুটে এসে বিন্দুকে সান্ত্বনা দেয়।
-বিন্দু, তুমি কি জ্ঞান হারিয়েছিলে?
-হ্যাঁ, মা, আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।
-তোমার বাবা বাজারে গেছেন।
এমন সময় বিন্দু একটু অবাক হয়, মা বলে, "ফাল্গুন এলে পরীরা ফুলে ভরিয়ে ফেলে, তাই না?"
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta