পরী রাণী ও আরশি
তিন ভাইবোনের মধ্যে আরশি সবার ছোট। সে শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বড় ভাই ইউশা কলেজে পড়াশোনা করে এবং বড় বোন ঐশী দশম শ্রেণীতে। আরশির বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকরি করেন। ফলে সকালে ৮:৩০ এর মধ্যে বাসা ফাঁকা হয়ে যায়। প্রথমে ইউশা কলেজে যায়, তারপর ঐশী স্কুলে চলে যায়, এবং তারপর আরশির মা মমতা বেগম অফিসে চলে যান। শেষবেলায়, আরশির বাবা তাকে নিয়ে বাসায় তালা লাগিয়ে চলে যান। বাসার চাবি আরশির হাতে দিয়ে বলেন, মা একা একা চলে আসো, বাবা দেরি হতে পারে। আরশি জিজ্ঞেস করে, একা একা রাস্তা পার হবো কীভাবে? বাবা বলেন, স্কুলের দারোয়ানকে বলো, সে তোমাকে রাস্তা পার করে দেবে। আরশি সম্মতি জানিয়ে মাথা নেড়ে। এভাবেই প্রতিদিনের ঘটনা ঘটে তাদের পরিবারে।
দুপুর ১২টায় ছুটির পর আরশি বাসায় ফিরল। অজান্তেই এক রুম থেকে অন্য রুমে চলে গেল। কেউ ছিল না। বাসা একেবারে নিঃস্তব্ধ। সে কিছুটা ভয় পায়। কিন্তু তার সাহসের অভাব নেই। স্কুলের ড্রেস খুলে ফ্রেশ হয়ে বসে থাকে। তারপর বাসার সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলো। এর পরেই তার ভয়টা কিছুটা কমে যায়। ঠিক তখনই হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়। পুরনো ভয় আবার ফিরে আসে। সে কি করবে, ভাবতে ভাবতে আরশি হঠাৎ করে কান্না শুরু করে দেয়। নিজেকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু সান্ত¡না কোনো কাজে আসে না। আবার মুখ নিচু করে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
হঠাৎ, একটা শব্দ শুনে আরশি চমকে ওঠে। সে দেখে, তার সমবয়সী একটি মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর, রূপকথার গল্পের পরীর মতো। মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল, তুমি কেমন আছ, আরশি? আরশি বলল, এখন আমি ভালো আছি।
কিন্তু তুমি কে? তোমাকে তো আমি চিনতে পারছি না। মেয়েটি বলল, আমার নাম কুমতিলানা। আমি পরী রাজ্যের রাজকন্যা। আমি তোমাদের বাসার পাশে দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তোমার কান্না শুনে ভেতরে এলাম। আরশি বলল, কিন্তু আমি তো বাসার দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রেখেছি, তুমি কীভাবে ঢুকলে? কুমতিলানা বলল, আমাদের জন্য এটা কিছু না। আমরা পরীরা যেকোনো জায়গায় যেতে পারি। আমরা যেমন খুশি রূপ ধারণ করতে পারি। আরশি বলল, আমি একা একা থাকতে ভালোবাসি না, খুব ভয় লাগে। তাই কান্না করছিলাম। কুমতিলানা, তুমি কি এখন আমার সাথে খেলতে পারবে? কুমতিলানা বলল, অবশ্যই, আমি তোমার সঙ্গে খেলতে পারব। তোমার কষ্ট দেখে আমি নিজেও দুঃখিত। এজন্যই আমি তোমার কাছে খেলতে এসেছি। তুমি চাইলে আমি প্রতিদিন তোমার সঙ্গে খেলতে আসব। তবে একটা শর্ত আছে, তুমি কাউকে কিছু বলতে পারবে না।
কুমতিলানার কথায় আরশি খুব খুশি হয়ে গেল। সে আনন্দের সাথে বলল, ঠিক আছে, আমি কাউকে বলব না। কুমতিলানা বলল, তাহলে আমরা এখন থেকে বন্ধু হলাম। চল, এখন খেলা শুরু করি। আরশি বলল, চলো, চলো...। এর পর থেকে আরশি একা একা বাসায় সময় কাটায় না। কুমতিলানা প্রতিদিন আসে আরশির সাথে খেলা করে। যখনই কেউ বাসায় ফিরে আসে, কুমতিলানা সাথে সাথেই অদৃশ্য হয়ে যায়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta