নিঝুম দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
বাংলাদেশকে “সুজলা সুফলা” এবং সবুজে পরিপূর্ণ একটি স্বর্গীয় সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করা হয়। কবির লেখনিতেও ফুটে উঠেছে দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
কবি দীজেন্দ্রলাল রায় বলেছিলেন-
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের নারী সে যে আমার জন্মভূমি’
কবি জসীম উদ্দীন এবং কবি জীবনানন্দ দাশ তাদের কবিতায় দেশের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন।
নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট দ্বীপ, যা নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এটি ১১টি ছোট-বড় চর নিয়ে গঠিত। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার এই দ্বীপটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৩ সালে এটি জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নিঝুম দ্বীপের পূর্বের নাম ছিল চর-ওসমান, বাউল্লারচর, এবং ইছামতীর চর, কারণ এখানে প্রচুর ইছা মাছ (চিংড়ির স্থানীয় নাম) পাওয়া যেত। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯১ বর্গ কিলোমিটার এবং এখানে ৯টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। এর বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোটখাটো ঝুপড়ি ঘর। ১৯৯৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিঝুম দ্বীপের মোট আয়তন ছিল ৩৬ হাজার ৯৭০ দশমিক ৪৫৪ হেক্টর।
নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য প্রধানত কেওডা বনের বিশালতা দিয়ে চিহ্নিত। এ বনের মাঝে লুকিয়ে থাকে নানা প্রজাতির হরিণ, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। লঞ্চে যাওয়ার পথে মনপুরা দ্বীপের দৃশ্য চোখে পড়ে, যেটি ১৯৭০ সালে দুর্ভিক্ষে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। শিল্পী জয়নুল আবেদীন সেই দুর্ভিক্ষের চিত্র অঙ্কন করে বিখ্যাত হন।
সমুদ্র তীরে তাঁবুতে রাত কাটানো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা; শীতল রাতে মেঘনার গর্জনে রাতটা শান্তিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনি মিস করবেন, তাঁবুতে শুয়ে সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করা। মুঘল আমলের নবাবরা সমুদ্র তীরে তাদের আবাস গড়তেন, তার অন্যতম নিদর্শন হলো আহসান মঞ্জিল। শীতের সকালে নিঝুম দ্বীপে খেজুরের রস আপনাকে গ্রামের জীবনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে।
কবি সুনির্মল বসু তার ‘শীতের সকাল’ কবিতায় এভাবে বর্ণনা করেছেন-
আবছায়া চারিদিক, ঝাপসা নিঝুম,
পউষের ভোরবেলা ভেঙে গেল ঘুম।
উষার দুয়ারে এক তুষারের ঢেউ
কখন পড়েছে ভেঙে, জানে না তা কেউ।
ঝিমঝিমে হিম-হাওয়া বয় বার বার,
দিকে দিকে বাজে যেন শীতের সেতার।
নিঝুম দ্বীপে যা আপনাকে সবচাইতে আকৃষ্ট করবে, তা হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসাথে দেখা। সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন মনে হয় একটি লালবৃত্ত ধীরে ধীরে পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এ দৃশ্য খুবই মুগ্ধকর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লঞ্চ ও ট্রলারে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে আপনি অনুভব করবেন, যেন ক্রিস্তোফার কলম্বাসের সমুদ্র অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।
এমনকি মুসলমানরা যখন আরব থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসতেন, তখনকার সময়ের কথা মনে পড়বে।
পরিশেষে, নিঝুম দ্বীপ একটি সম্ভাবনাময় জায়গা, যেখানে সরকার ব্যবসায়িক শিল্প গড়ে দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারে এবং মানুষের জন্য নিরাপদ আবাস গড়ে তুলতে পারে।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta