যাওয়া সম্ভব হলো না বইমেলায়
আজ বৃহস্পতিবার। আগামীকাল শুক্রবার শেষ হবে ২০২৫ এর একুশে চেতনায় উজ্জীবিত প্রাণের বইমেলা। বইমেলায় যাওয়ার জন্য মনিরা, মারিয়া, রোকাইয়া, রেশমা, রিমা ও রাফিয়ার মন উত্তেজনায় ভরপুর। তারা বারবার ভাবছে কখন তারা বইমেলায় যাবে, তাদের মাঝে এক অসীম আগ্রহ কাজ করছে। বইমেলায় গিয়ে নতুন নতুন বই খুঁজে বের করবে, বইয়ের সুন্দর প্রচ্ছদ দেখে মুগ্ধ হবে, নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকবে, লেখকদের সঙ্গে আলাপ করবে, সেলফি তুলবে, পছন্দের বই কিনবে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবে এবং আনন্দ উপভোগ করবে। আগের মতো এবারও তারা নানার সাথে বইমেলায় যাবে, তবে এবারের সফর হবে একটু আলাদা। কারণ এবার তারা সকল খালাতো বোন একত্রে যাবে। তাই তারা আগের দিন নানার বাড়িতে এসে জড়ো হয়েছে। কে কোন বই কিনবে তা রাতেই ঠিক করেছিল। কিন্তু রাফিয়া ছিল একটু চতুর, সে সবার পছন্দের বইয়ের কথা শুনে নিজের পছন্দ গোপন রাখে। কেউ তাকে জিজ্ঞেসও করেনি। সন্ধ্যা হলে তারা সবাই ঘুমাতে চলে গেল। রাতে সবাই শুয়ে পড়ল, সকালে ভোর হল। পাখিরা গাছের মধ্যে কিচিরমিচির করছে, দূরের মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজান শোনা যাচ্ছে। মনিরা নানাকে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ডাকছে, কিন্তু নানা কোনো সাড়া দিচ্ছে না। একে একে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসে ডাকতে থাকে, তবুও কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। পাড়ার মানুষজনও আসতে শুরু করে। পরিস্হিতি অবনতির দিকে এগিয়ে গেলে ঘরের দরজা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করে এবং দেখল মনিরার নানা পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। সবাই মনিরার মৃত নানাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পাড়ার মানুষজন এসে উপস্থিত হয়ে শোক প্রকাশ করে, সবাই বলছে, তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। আর এমন মানুষ খুব কমই পাড়ায় পাওয়া যাবে। জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষ হয় এবং বাড়ির পাশের মসজিদে তাকে দাফন করা হয়। শোকের মেঘ আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ মনিরার মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। ফোনটি রিসিভ করে সে বলে- হ্যালো...
বইমেলায় আসবে না?
কে, চিনতে পারলাম না?
ও, আমি তুহিন।
আমার নানা..... কান্নায় ভরা কণ্ঠে বলল মনিরা।
শান্ত হও। কী হয়েছে?
আমার নানা ভাই মারা গেছেন। আজ আমাদের সাথে বইমেলায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আর যাওয়া হলো না ভাই।
আল্লাহর ইচ্ছা মানুষ কিছুই করতে পারে না। এসব কষ্ট সহ্য করতে হয়।
এটা তো জানি, কিন্তু মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না।
প্রকৃতির নিয়ম মেনে নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
হঠাৎ মোবাইল সংযোগ চলে গেল। মনিরা নানার রুমে গিয়ে রোকাইয়ার পাশে বসে। দেয়ালে টাঙানো নানার ছবিটির দিকে সবাই চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। নানার স্মৃতি যেন সকলের মনে ফিরে আসে। একই সঙ্গে মনে পড়ছে, আজ নানার সাথে বইমেলায় যাওয়ার কথা ছিল, সেটাও। আজ যখন নানার জীবন প্রদীপ নিভে গেল, তখন ভাষা শহীদদের স্মৃতির একুশে বইমেলার বইয়ের মধ্যে যে আলো ছিল, সেটাও নিভে গেল। মনিরাদের আর যাওয়া হলো না বইমেলায়। তাদের পছন্দের লেখকের সেরা বইও কেনা হলো না। মন থেকে আশা অপুর্ণ হয়ে রইল। তারা অপেক্ষা করছে আগামী বছরের বইমেলার জন্য।
পীরগাছা, রংপুর
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta