সংখ্যালঘু রাজনীতির শিরোনামে অসততা
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কতটা কার্যকরভাবে ধর্মীয় জনগণের অধিকার রক্ষা করে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে তাদের প্রায়ই মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর দাবিগুলির কারণে সংগঠনটি সমালোচিত। এই ভিত্তিহীন দাবিগুলো রাষ্ট্রে শান্তি ও সম্প্রীতি আনার বদলে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ঐক্য পরিষদের কিছু কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনে পরিচালিত হয়। বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তাদের প্রচারণা বাংলাদেশের শত্রুদের হাতে রাজনৈতিক অস্ত্র তুলে দেয়। সম্প্রতি ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে যে, ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর সাড়ে চার মাসে ২৩ জন সংখ্যালঘু হত্যা হয়েছেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এসব ঘটনার সত্যতা যাচাই করে কোনো প্রমাণ পায়নি।
ধর্মীয় জনগণের অধিকার রক্ষা করার কথা বলে প্রতিষ্ঠিত ঐক্য পরিষদ কিছু বিশেষ স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে হয়। ২৩ জন সংখ্যালঘু হত্যার দাবি বিশ্লেষণ করলে এই ধারণা আরও শক্তিশালী হয়। জাতি যখন নতুন উদ্দীপনায় এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখন আমাদের প্রতিবেশী দেশ একযোগে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, তাদের মুখ্য ইস্যু হয়ে উঠেছে। ভারতীয় মিডিয়া ৫ আগস্টের পর থেকে অবিরাম অপতথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে। যখন তাদের প্রচারণা অকার্যকর হয়ে গেছে, তখন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ২৩টি হত্যার দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে। ভারতীয় প্রোপাগান্ডায় হাওয়া দিয়ে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে।
ঐক্য পরিষদের সংখ্যালঘু হত্যার দাবি নিয়ে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করেছে। ২৩টি ঘটনার মধ্যে ২২টির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। একটির তথ্য পাওয়া না গেলেও, এটি নিশ্চিত যে এটি সাম্প্রদায়িক কারণে ঘটেনি।
গবেষণায় জানা গেছে, সাতটি মৃত্যুর সাথে চুরি ও দস্যুতার সম্পর্ক রয়েছে, চারটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের কারণে ঘটেছে, তিনটি ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদপান এবং বিদ্রূপাত্মক মন্তব্যের কারণে, দুটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, দুটি ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণে মৃত্যু, একটি স্থানীয় সঙ্ঘাতে, একটি জমিজমার বিরোধ এবং একটি আত্মহত্যার ঘটনা ছিল। একটিমাত্র ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি, তবে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই তা নিশ্চিত করা গেছে।
ঐক্য পরিষদে মিথ্যা দাবি তোলে এমন ঘটনা নতুন নয়। অতীতে সরকার বিরোধী প্রচারণায় তাদের একই ধরনের আচরণ দেখা গেছে। তারা এমন গুরুতর অভিযোগ তোলার সময় কোন ধরনের যাচাই-বাছাই করে না, আর রাষ্ট্রের শত্রুরা এই সুযোগকে কাজে লাগায়। ঐক্য পরিষদসহ কয়েকটি গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে।
ঐক্য পরিষদের মিথ্যা দাবি, বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায়, পরবর্তী চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নিয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলেও তারা ভুয়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে।
ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ড দেশ ও জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী। তারা রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য নানা অসৎ পথ অবলম্বন করে। বর্তমানে তারা কিছু নির্দিষ্ট লোকের অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করছে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে তারা সংখ্যালঘু রাজনীতির সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে।
ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বিভিন্ন সময় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, অথচ তিনি তার নিজ সম্প্রদায়ের অপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি খুনি ও ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে আইনি সহায়তা প্রদান করেছেন, যা অত্যন্ত নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিকের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, মাতলামি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেকে সংখ্যালঘু রাজনীতির সেবক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, অথচ তিনি এসব গুরুতর অপরাধে লিপ্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে তাকে নেপালে রাষ্ট্রদূত করা হয়েছিল, তবে সেখানে গিয়ে তিনি বাংলাদেশ বদলে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার কর্মকাণ্ড দেশে এবং দেশের বাইরে দেশের সুনাম নষ্ট করেছে।
সংখ্যালঘু রাজনীতির সাইনবোর্ড হিসেবে এই ধরনের বিতর্কিত নেতাদের ব্যবহার করা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী। এখন সময় এসেছে, এ ধরনের অপকর্মকে আর সহ্য করা হবে না। ঐক্য পরিষদের বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নেতাদেরও এই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। তারা কি চান, তাদের সংগঠনের মধ্যে থাকা এসব নেতার কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পর্ক রাখবেন?
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta