অনিয়ন্ত্রিত কর্মীদের সুশৃঙ্খল করা জরুরি
অতীত ও বর্তমানের পরিবর্তনের এই সময়ে এমন একটি আলোচনার যৌক্তিকতা কেউ অস্বীকার করবেন না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসংগঠিত কর্মীরা কখন দল, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হয়ে ওঠে এবং কখন বোঝায় পরিণত হয়—বিশেষ করে প্রধান দুই দলের কর্মীদের আচরণ ও মনোভাব বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
জামায়াত একটি বড় দল হলেও, এ আলোচনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। কারণ, তাদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত কর্মী নেই বললেই চলে, আর থাকলেও সংখ্যা নগণ্য। তবে, নিয়ন্ত্রিত কর্মীরাও কখনো কখনো দল ও সমাজের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। নতুন রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে যে তরুণরা, তাদের জন্য অতীতের রাজনৈতিক দলগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কর্মীদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চ্যালেঞ্জিং। অতীত ও বর্তমানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আগামী দিনের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল হতে হবে। তরুণদের রাজনৈতিক পরিপক্বতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অপ্রাসঙ্গিক হলেও, অভিজ্ঞতা থেকে শেখার কোনো বিকল্প নেই। তাই ভবিষ্যৎ স্বচ্ছ রাখতে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।
দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল তাদের অনিয়ন্ত্রিত কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করেছে। এই সময়ের মধ্যে সংঘটিত অপরাধ ও অনিয়ম জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। অর্থনৈতিক লুটপাট ও সম্পদ পাচারের বিষয়গুলোও একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে।
এক সময় বলা হয়েছিল, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নত হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এমন অনুমান নির্ভুল ছিল না, বরং রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হিসেব ছিল। এসব বিষয় ভবিষ্যতের রাজনীতিতে ভুলের পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
২৪ আগস্টের গণজাগরণের পর দেশে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, রাজনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এই কর্মীদের আসল উদ্দেশ্য ও আনুগত্য কোথায়, তা যাচাই করা দরকার। নতুন দলে তাদের প্রবেশ আদর্শিক, নাকি কৌশলগত, তা বিবেচনা করা জরুরি। অনিয়ন্ত্রিত কর্মীদের প্রভাব রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে, নেতাদের কার্যক্রম দলীয় সমর্থকদের গ্রহণযোগ্যতার উপর প্রভাব ফেলে। অতীতে সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়ে নির্বাচনের নামে সিলেকশন হয়েছে। আগামীর নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে কর্মীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে ভোটারদের আস্থা অটুট থাকে।
ইতোমধ্যে অতীত শাসনামলের নেতিবাচক প্রতিচ্ছবি বিভিন্ন স্থানে দৃশ্যমান হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যেও উঠে এসেছে যে, কিছু সংগঠন এখনও আগের সরকারের আর্থিক ও নৈতিক সহায়তায় সক্রিয় রয়েছে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সতর্ক থাকা দরকার।
দিন বদলেছে, তাই রাজনীতির ধরণও বদলাতে হবে। আধুনিক রাজনীতিতে শুধু জনপ্রিয় নেতারা নীতি নির্ধারণ করেন না, বরং বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে নীতিগুলো গঠিত হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোরও দ্রুত এই বাস্তবতা আত্মস্থ করা দরকার।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta