নদী দখল ও দূষণ
১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল শবেবরাতের ছুটি। পত্রিকা অফিসে একদিন ছুটি থাকলেও কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। তবে সেই দিনটি ছুটির দিন হওয়ায় দৈনিক নয়া দিগন্তের ফ্যামিলি ডে আয়োজন করা হয়। নয়া দিগন্তের সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেন। ঢাকার সদরঘাট থেকে মেঘনা নদী পর্যন্ত একটি নৌ-ভ্রমণ আয়োজন করা হয়। দৈনিক নয়া দিগন্তের কর্মপরিধি বিস্তৃত হওয়ায় বহুদিন এ ধরনের উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবারের নৌ-ভ্রমণের পথে বুড়িঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা নদী ছিল। ঢাকার উত্তর দিকের তুরাগ ও বালু নদী হারিয়ে গেছে, ঠিক তেমনি দক্ষিণ এবং পশ্চিমে বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীও হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার উত্তরে নড়াইল ও দেবধোলাই নদী ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার কালো কুচকুচে পানি এই দূষণের চিত্রই ফুটিয়ে তোলে। বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত হয়ে পড়েছে এবং একটি ফলকে লেখা রয়েছে, ‘নদী রক্ষা করুন’। এই নদী, যা মা হিসেবে পরিচিত, আমাদের খেয়াল না রাখার কারণে তা মরে যাচ্ছে। তাই বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা, পদ্মা, মেঘনা নদীগুলোর অবস্থা সংকটমুক্ত নয়। মেঘনা নদী থেকে একসময় ঢাকার নবাবরা পরিষ্কার পানি সংগ্রহ করতেন, কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। শীতলক্ষ্যা শব্দের অর্থ শান্ত এবং ঠাণ্ডা, কিন্তু আজকাল এর অবস্থা ভিন্ন। বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। শীতলক্ষ্যার পানি দূষণের কারণে তার একে একে হারিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে আমাদের অযত্ন ও অবহেলা।
বুড়িগঙ্গার ধলেশ্বরীতে উৎপত্তি ধলেশ্বরীতেই তার শেষ। বুড়িগঙ্গা নদীর ১০ মাইল দীর্ঘ পথে একই দৃশ্য বিরাজমান, যেখানে নদী ও তার তীরের দখল চলছে। দখলদাররা নদীর বালু ও মাটি চুরি করছে। বাল্কহেডে এসব বালু ভর্তি হচ্ছে এবং নদীর তীরের জমিতে পাকা ঘাট তৈরি করা হচ্ছে। অথচ কেউই নদীর রক্ষা নিয়ে সচেতন হচ্ছে না। নদী মারার এই কর্মকাণ্ড থেকে আমাদের মনোযোগ সরে যাচ্ছে, যার ফলে নদী দ্রুত দূষিত হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা সাভারের কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে ফতুল্লা পর্যন্ত পৌঁছায়, কিন্তু তার স্বাস্থ্য আজ বিপন্ন।
নদীর তীরবর্তী অনেক জায়গায় ইটভাটা রয়েছে, যা সুকৌশলে নদী দখল করেছে। ইটভাটাগুলোর কারণে নদীর পানি ও বালু অতিরিক্তভাবে ব্যবহার হচ্ছে। পদ্মা ও মেঘনার স্রোত পরিবর্তিত হয়ে একাকার হয়ে গেছে, যা দখল ও দূষণের প্রভাবে ঘটছে। আমাদের ছোটবেলায়, মা আমাকে পদ্মা ও মেঘনার পার্থক্য বোঝাতেন এবং এটি কুরআন শরিফের সূরা আর রহমানের মাধ্যমে তুলে ধরতেন। তখন চাঁদপুরে পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি স্পষ্টভাবে আলাদা ছিল। কিন্তু বর্তমানে, নদীগুলোর স্রোত ও পানি দূষণের কারণে এ পার্থক্য আর স্পষ্ট নেই।
১৪ ফেব্রুয়ারি বাঙালির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি বসন্তের আগমনের একটি চিহ্ন, যখন প্রকৃতিতে পাতাঝরার স্নিগ্ধ দৃশ্য ফুটে ওঠে। আর এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করা হয় শবেবরাতের পবিত্রতায়। নয়া দিগন্তের সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের প্রায় এক হাজার সদস্য এদিন উৎসবে অংশ নেন। সকালে ওয়াইজ ঘাটে সবাই একত্রিত হন এবং তারপর নৌযাত্রা শুরু হয়। চলমান নৌবিহারে নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করেন সবাই, পাশাপাশি পরিবার সদস্যরা খেলাধুলায় অংশ নেন। দুপুরের খাবারের পর পুরুষ সদস্যরা জুমার সালাত আদায় করেন এবং পরে হাঁড়িভাঙা খেলায় অংশ নেন। বিকেলে ফেরার পথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta