তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতিবছর হাজারো পরিযায়ী পাখির নির্মম হত্যাকােণ্ড
প্রতি বছর শীতকাল শুরু হওয়ার আগেই তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র নদে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। এই পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য খুঁজতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। তবে একদল শিকারির নিষ্ঠুরতার কারণে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র এখন পাখিদের জন্য বিপদের জায়গায় পরিণত হয়েছে।
শিকারিরা প্রতি বছর হাজার হাজার পাখি শিকার করে থাকে। এসব পাখি কেউ খাবারের জন্য ব্যবহার করছে, আবার কেউ তাদের বিক্রি করছে। পাখিপ্রেমীদের আশঙ্কা, যদি এই অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে এক সময় এই অঞ্চলের নদীগুলোর পাখির সংখ্যা শূন্য হয়ে যাবে। সম্প্রতি একদল ফটোগ্রাফারের নজরে আসে পাখি শিকারিদের হিংস্র কার্যকলাপ।
সূত্র মতে, ডিসেম্বর থেকে মার্চের প্রথম দিক পর্যন্ত তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র নদে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়ে। নদীর পরিবেশ এবং খাবারের প্রাচুর্যের কারণে এসব পাখি এখানে অবস্থান করে। পাখিগুলো সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাদাখ থেকে আসে। এর মধ্যে ৫০-৫৫ প্রজাতির পাখি, যেমন হাঁস, প্যাচা, তিসাবাজ, জিরিয়া, মনকান্ড ইত্যাদি পাওয়া যায়।
এ every বছর একদল শিকারি এসব পাখি নির্বিচারে শিকার করে এবং এই শিকার করা পাখি তারা খাচ্ছে অথবা বিক্রি করছে। আবার কিছু উচ্চ শ্রেণির মানুষ এই পাখি উপভোগ করছে। দীর্ঘদিন ধরে শিকারিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে পাখিপ্রেমীদের কাছ থেকে।
গত শুক্রবার গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বুলবুলির চরের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে বন্দুকসহ এক শিকারিকে পাখি শিকার করতে দেখা যায়। সৌখিন ফটোগ্রাফারদের সাহায্যে শিকারি ধরা পড়ে। সেই সময় আলোকচিত্রী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, সাহিত্যকর্মী রানা মাসুদ, প্রকৌশলী ফজলুল হক, হাসান মাহবুব আখতার লোটন সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। শিকারির হাতে দুর্লভ দুটি পরিযায়ী হাঁস দেখা যায়।
ফটোগ্রাফার ড. তুহিন ওয়াদুদ শিকারির একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার নেন। ওই সাক্ষাৎকারে শিকারি জানান তার নাম সুজন মিয়া। তিনি গাইবান্ধা সদরের কামারজানি গিদারি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা পাখি শিকার করতেন। সুজনের বন্দুক হারিয়ে গেছে এবং সে অন্যের বন্দুকে শিকার করছে। সেই ব্যক্তির নাম উজ্জ্বল চন্দ্র সরকার। তারা তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্র নদে পাখি শিকার করছে। শনিবার তুহিন ওয়াদুদ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছেন।
অবেদনটিতে বলা হয়েছে, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদীতে এক শিকারি দুটি পরিযায়ী হাঁস এবং বন্দুকসহ ধরা পড়েছে। শিকারির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তুহিন ওয়াদুদ বলেন, প্রতি বছর এই অঞ্চলের নদীগুলোতে হাজার হাজার পাখি শিকার হয়, অথচ প্রশাসনিক ব্যবস্থা কিছুই নেয়া হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে একদিন এই অঞ্চলের নদী থেকে পাখির সংখ্যা হ্রাস পাবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta