অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় মিঠা পানির মাছের শুঁটকি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সৌদি আরবে বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই ঘোষণার পর, অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে কেন তিনি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজনের জন্য সৌদি আরবকে বেছে নিলেন।
তিনি বৈঠকের সময় জানাতে পারেননি, তবে শিগগিরই এটি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, যাকে 'এবিএস' নামেও ডাকা হয়, এই বৈঠকে যোগ দিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর, ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন।
সৌদি আরব এক বিবৃতিতে ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ এবং দেশটিতে শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরব তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।‘
নিরপেক্ষ স্থান
চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোও ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের জন্য আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।
তবে মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল সেলেম মনে করেন, ‘ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের জন্য সৌদি আরব একটি যৌক্তিক নির্বাচন, কারণ এটি একটি নিরপেক্ষ ভেন্যু।’
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো ইউরোপীয় দেশে এই বৈঠক আয়োজন অসম্ভব।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক খাত্তার আবু দিয়াব বলেন, ‘পূর্বে জেনেভার মতো নিরপেক্ষ স্থানে বৈঠক আয়োজন করা হতো। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় সৌদি আরবকে বেছে নেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সৌদি আরব পুতিনের সঙ্গে সফলভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং সৌদি আরব আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য নয়, যা পুতিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে পুতিনের গ্রেফতারের ঝুঁকি নেই।
২০২৩ সালে আইসিসি পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সৌদি আরবে গেলে পুতিনের গ্রেফতারের ঝুঁকি নেই।
রিয়াদের মধ্যস্থতায় রাশিয়া সম্প্রতি তিন বছর ধরে আটক থাকা মার্ক ফোগেলকে মুক্তি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মতে, মার্ক ফোগেলের মুক্তিতে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সৌদি আরব একাধিকবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং স্থায়ী শান্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুতিনের রিয়াদ সফরের সময় এমবিএস তাকে ‘সৌদি আরবের বিশেষ অতিথি’ বলে অভিহিত করেন।
বিশ্লেষক আবদুল্লাহ বাবুদ মনে করেন, সৌদি আরব বিভিন্ন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা নিতে চায় এবং নিজের আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে পরিচিতি বাড়াতে চায়।
তিনি আরও মনে করেন, সৌদি আরব কূটনৈতিক সুবিধা পেতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে রিয়াদের অংশগ্রহণ বাড়াবে।
পল সেলেম বলেন, ট্রাম্প সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চান এবং সম্ভবত একটি যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি-ইসরাইল চুক্তির জন্য কাজ করতে আগ্রহী।
ড. নিদাল চৌক বলেন, সৌদি আরব ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক দেশ যুক্তরাষ্ট্র হলেও, সৌদি আরব এবং রাশিয়া তার পরে অবস্থান করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সৌদি আরব তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বড় তেল উৎপাদক হিসেবে সৌদি আরব ও রাশিয়ার স্বার্থ অভিন্ন, তাই ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে তেলের দাম ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
‘ট্রাম্প সম্ভবত আমেরিকান জ্বালানি কোম্পানির জন্য তেলের ভালো দাম নিশ্চিত করতে চাইবেন,’ বলেন বাবুদ।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প সৌদি আরবের মতো তেল রফতানিকারক দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।
কৌশলগত স্বার্থ
ট্রাম্পের কৌশলগত স্বার্থে সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালে তার প্রথম বিদেশ সফর সৌদি আরবে ছিল।
ট্রাম্প ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে সৌদি আরবে সফর করবেন, তবে শর্তসহ।
‘যদি সৌদি আরব আমাদের থেকে ৪৫০-৫০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনতে চায়... তবে আমি সেখানে যাব,’ তিনি বলেছেন।
ক্রাউন প্রিন্স বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
‘তবে আমি তাকে বলব, এই বিনিয়োগ প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার করতে,’ ট্রাম্প দাভোসে মন্তব্য করেছেন।
ড. নিদাল চৌক মনে করেন, সৌদি আরবকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখেন ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
ড. খাত্তার আবু দিয়াব বলেন, ট্রাম্প চীনকে পেছনে ফেলতে সৌদি আরব ও আশেপাশের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
যদিও সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক কিছু পরিবর্তন সৌদি আরবের ভাবমূর্তি উন্নত করেছে।
এটা ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সৌদি আরবের রাজনৈতিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতাও বাড়িয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta