বুটের শব্দ
শীতের সকাল। শীতল হাওয়ার পরশ। চারপাশে কুয়াশার মোড়া। ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে। এলাম ঘড়ির কষ্টের কারণেই মা বকাঝকা করতে করতে আমাকে জাগিয়েছেন। মাথা একটু ভারী লাগছে। রাতে মোবাইল হাতে নিয়ে সময় গড়িয়ে গিয়েছিল, তাই ঘুম কম হয়েছে। রিমির মেজাজ একটু খারাপ।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বইয়ের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরোতে যাচ্ছিল, তখন তার বাবা নকুল দত্ত এসে হাসতে হাসতে বললেন- মা, তোমার জন্য নতুন বুট নিয়ে এসেছি, এগুলো পরে প্রাইভেটে যাও। নকুল দত্ত বড়ই সাদাসিধে মানুষ, সে কখনো তার মতামত প্রকাশে আগ্রহী হয়নি। রিমি তার বাবার হাত থেকে জুতার বাক্সটা নিয়ে খুলল। দেখল একজোড়া নতুন বুট। রিমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, মোজা কোথায়? তার বাবা ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বললেন- আজকে নিয়ে আসব মা।
রিমি তখন মেজাজ হারিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল- ছেলেদের বুট কেন? আর সেই সাথে মোজা ছাড়া! এখন দাত বের করে হাসছেন? আমি এই বুট পরব না বলে জুতাগুলো মেঝেতে ফেলে দিলো। রিমির মা অরুনা রানী খুব রেগে গিয়ে রান্নাঘর থেকে এসে বললেন, জুতা পর, ছেলে-মেয়ে লেখা কি কোথাও দেখেছো? তুমি এভাবে না বলে কিছু করতে পারো না। তারপর আবার রান্নাঘরে চলে গেলেন। রিমির সামনে এসএসসি পরীক্ষা। তার মা পড়াশোনার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। তাই রিমি ভয় পেয়ে মোজা ছাড়া বুট পরে ফেলল। এরপর বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে বুটের আওয়াজ হচ্ছিল ঠক ঠক। রিমির ঠাকুমা এ সময় কাঁপানো গলায় বললেন, মিলিটারি আসছে, মিলিটারি আসছে। রিমি হেসে ঠাকুমাকে বলল, চুপ করো বুড়ি। তার ঠাকুমা বয়সে প্রায় সত্তর-পঁচাত্তর, কুঁজো হয়ে লাঠি নিয়ে হাঁটেন। ঠাকুমা রিমিকে খুব ভালোবাসেন। তাই রিমি তার ঠাকুমার সাথে অনেক কথা বলে। রিমি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, আমি প্রাইভেট ক্লাসে যাব না। এই কথা শুনে অরুনা রানী রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বললেন, পরীক্ষা কি আমি দেবো? তাড়াতাড়ি যা, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাস্টার তো দেরি করে পড়াবে না! নকুল দত্ত বারান্দার এক কোণে চুপচাপ বসে ভাবছিলেন, সকালে ঝামেলা তো আমার কারণে শুরু হলো। নকুল দত্ত সব সময় নিজের দোষ বুঝে এবং চুপচাপ সহ্য করে। ঠাকুমা রিমিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, জুতা পর, কেউ কিছু বলবে না। শেষে রিমি বুট পরে প্রাইভেট ক্লাসে গেল। প্রাইভেট থেকে ফিরে রিমি বইয়ের ব্যাগটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো এবং গোমড়া মুখে বিছানায় বসে পড়ল। ঠাকুমা তার মনোভাব বুঝে নিলেন। বান্ধবীরা তাকে উপহাস করেছে। ঠাকুমা কাছে এসে বললেন, কি হয়েছে দিদিমনি? রিমি মুখ ফিরিয়ে বলল, তুমি তো বলেছিলে, কেউ কিছু বলবে না। তারা আমার বুটের সাথে ঘোড়ার গাড়ির আওয়াজ তুলেছে। বাবা তো বুট আনেনি, ঘোড়ার গাড়ি এনেছে! ঠাকুমা মুচকি হাসলেন এবং বললেন, আওয়াজ মানুষের মনে স্মৃতি তৈরি করে। অনেক স্মৃতি ফিরে আসে আওয়াজ শুনে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta