অনন্য দান
প্রতিদিনের মতো নুগায়ের সকালে দাদু ভাইয়ের সাথে বসে শীতের নরম আলো হাতে-পায়ে মাখে।
ঘরের পাশে দীঘির কালো পানিতে অতিথি পাখির কলতানে মুগ্ধ হয়ে তারা সময় কাটায়। দাদু তাকে গরম চাদর মুড়িয়ে কোলে নিয়ে রোজই উপভোগ করে অতিথি পাখির গান, শিশিরে চিকচিক করা দূর্বাঘাসের শুভ্রতা। আজ নুগায়ের একদম কৌতূহলী হয়ে দাদুকে প্রশ্ন করে, দাদু অতিথি পাখিরা কেন আমাদের দেশে আসে, তাদের বাড়ি কোথায়?
দাদু বলেন, নুগায়ের, তারা সাইবেরিয়া থেকে আসে, সেখানে শীতে তাপমাত্রা খুবই কমে যায় এবং বরফে ঢেকে যায় নদী-নালা। তাই তারা শীতকাল কাটানোর জন্য আমাদের দেশে আসে। নুগায়ের বিস্মিত হয়ে জানতে চায়, তারা কি বিমানে করে আসে?
দাদু বলেন, না! তারা নিজেদের ডানায় ভর করে আসে।
নুগায়ের ভাবতে পারে না কীভাবে পাখিরা পথ চিনে এত দূর আসে। চিন্তা করতে করতেই মা ভাঁপা পিঠা নিয়ে আসে। পিঠা খেতে খেতে নুগায়ের আবার দাদুকে প্রশ্ন করে, দাদু তারা আমাদের অতিথি, তাহলে কেন করিম চাচা তাদের ফাঁদে আটকে মারে? এ কী ধরনের আতিথেয়তা?
দাদু বলেন, পাখি শিকার করা বেআইনি। যারা এমন কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রশাসনে অভিযোগ জানাতে হবে।
নুগায়ের তার প্রশ্ন শোনে। তারপর সে বলে, দাদু, পাখিরা সাইবেরিয়া থেকে আসে শীত থেকে বাঁচতে, কিন্তু আমাদের পাড়ার শিশু, বস্তির মানুষ শীত থেকে বাঁচবে কোথায়?
দাদু তার প্রশ্ন শুনে প্রশংসা করে বললেন, এটাই হল কাজের প্রশ্ন। তাদের যেতে হবে কোথাও না, আমরা তাদের সাহায্য করব, গরম জামা দান করব।
নুগায়ের স্কুলে যাওয়ার পথে টোকাই ছেলেকে কাঁপতে দেখে তার নিজের সোয়েটারটি দিয়ে দেয়। ঘরে এসে বাবা জানতে চান, তোমার সোয়েটার কোথায়?
নুগায়ের সরল উত্তর দেয়, ওই টোকাই ছেলেটাকে দান করে দিয়েছি।
বাবা-মা হইচই করে ওঠেন। বাবা বলেন, তাদের জন্য পুরোনো জামা রেখেছি। এ সময় দাদু এসে জানতে চান, কী হয়েছে?
নুগায়ের বলে, দাদু, আমি আমার লাল সোয়েটার টোকাই ছেলেটাকে দান করেছি, এখন বাবা-মা আমাকে বকা দিচ্ছে।
দাদু বলেন, এটা তো ভালো কাজ করেছে, তোমরা তাকে প্রশংসা করতে পারতে। বাবা বলেন, পুরোনো জামা দিলে তো চলত, এত নতুন সোয়েটার তো না দিলেও চলত। দাদু রেগে গিয়ে বলেন, তোমরা কি কুরআনের কথা জানো না? আল্লাহ বলেছেন- ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত নেকি অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় দান না করবে।’ আর নুগায়েরের জন্য আজই নতুন গরম জামা কিনে দেব।
দাদু ভাইয়ের আদেশে নুগায়েরের মুখে এক ছোট হাসি ফুটে ওঠে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta