আপন বোনের জন্য নয়, শুধু ভালোবাসায় স্বামীর কিডনি দিয়েছি : টুনি
স্বামীর জীবন বাঁচাতে নিজের কিডনি দিয়ে দিয়েছিলেন টুনি, কিন্তু সেই স্বামী সুস্থ হয়ে অন্য এক সম্পর্কের পিছু নিয়েছেন এবং অনলাইন জুয়ায় সময় কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে প্রেমিকার সঙ্গে থাকছেন তিনি। এই হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনা ঘটেছে সাভারের কলমা এলাকায়।
টুনি তারেকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও তারেক গ্রেপ্তার হয়েছেন, বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। বিবাহের মাত্র দুই বছর পর টুনি জানতে পারেন, তার স্বামী মোহাম্মদ তারেকের দুই কিডনি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে এবং তাকে বাঁচাতে নিয়মিত ডায়ালাইসিস ছাড়া অন্য উপায় নেই।
টুনি সম্প্রতি সন্তানের মা হয়েছেন, আর সংসারে দু’বছর পার হওয়া মাত্র। এমন কঠিন সময়ে এই খবর তার জীবনে বড় ধাক্কা দেয়। বোনের রক্ত মিল থাকলেও তিনি কিডনি দিতে রাজি হননি, তাই নিজেই কিডনি দিয়ে তারেককে সুস্থ করেন।
যিনি তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন, সেই স্বামী পরবর্তীতে তাঁকে মারধর শুরু করেন। অবশেষে টুনি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়, আর তারেক প্রেমিকার সঙ্গে বসবাস করছেন।
টুনি বলেন, ‘আমার বিয়ে ২০০৬ সালে হয়। বিয়ের দুই বছর পর তারেকের কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে, যা তখন প্রায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। ডাক্তাররা বলেছিলেন, তিনি ৬ মাস বাঁচবেন। তখন জরুরি পাসপোর্ট করিয়ে তাকে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাই। আমাদের সাহায্য চাননি তার পরিবারের কেউ। আমার পরিবারের লোকজন আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমরা ভেলরের সিএমসি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানকার ডাক্তাররা বললেন, তিনি ১০ বছর মেডিসিনে থাকবেন। আমি তাকে দশ বছর চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু পরে জানলাম ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন। তখন তারেক ভেঙে পড়েছিলেন।
আমরা তিন মাসের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিই। এই সময়টা অনেক সংগ্রাম করে পার করি। তারেকের বড়বোন কিডনি দিতে রাজি ছিলেন না, বলেছিলেন তার পরিবার আছে, তাদেরও মতামত আছে। আমি নিজেও নিশ্চিত ছিলাম না দিতে পারব কিনা, কারণ রক্তের গ্রুপ মিল থাকতে হয়। সেবার দিল্লি থেকে ডাক্তার এসেছিলেন, বলেছিলেন আমি দিতে পারি। দিল্লি গিয়ে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো হয়, যা জন্য ৩০ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে হয়। পরিবার ও আত্মীয়দের সহযোগিতায় সেই টাকা জোগাড় করি।’
পরিবারের তথ্যমতে, ২০০৬ সালে মালয়েশিয়া প্রবাসী তারেকের সঙ্গে কলেজপড়ুয়া তরুণী উম্মে সাহেদীনা টুনির বিয়ে হয়। এক বছর পর তাদের একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়, নাম রাখা হয় আজমাইন দিব্য। সবকিছু স্বাভাবিক চলছিল, তবে ২০০৮ সালের মাঝামাঝি তারেক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকরা জানান, তার কিডনি প্রায় অকেজো, দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করতে হবে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta