পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রে ননি ফলের নতুন চারা লাগানো হলো
হিজরি নববর্ষ ১৪৪৭ উদযাপনের অংশ হিসেবে সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান সংলগ্ন ‘বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে’ ননি ফলের একটি ফুলন্ত চারা রোপণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেগম রোকেয়ার ভাতিজি এবং পায়রাবন্দের জমিদার সাবের পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের উত্তরসূরি রনজিনা সাবের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল।
এছাড়াও জায়গীরহাটের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের সহ-গ্রন্থাগারিক আবেদা সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ননি ফলসহ বিরল বিভিন্ন গাছ যেমন ধুমকলা, কাইজেলিয়া, কুরচি, নাগকেশর, পলাশ, কাঁঠালিচাঁপা, সোনাপাতি, লালশাপলা, নীলশাপলা, হাজারবেলি, কুলঞ্জন, কাউ, তানপুরা, হিজল, সিভিট, তেলশুর, মিউজিকাল নোটস প্ল্যান্ট, সেঞ্চুরি প্ল্যান্ট, মহুয়া, রসুনগন্ধী, ব্লাড ফ্লাওয়ার এবং বনজুঁইয়ের সাথে নতুন উদ্ভিদ হিসেবে ননি ফল যুক্ত হলো।
প্রধান অতিথি রনজিনা সাবের বলেন, পায়রাবন্দে রোকেয়ার জন্মভিটায় ননি ফলের চারা রোপণ করতে পেরে তিনি গর্বিত।
বিশেষ অতিথি রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, রোকেয়ার জীবন ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত এই স্মৃতিকেন্দ্রটি প্রকৃতির সৌন্দর্যে আবৃত। ভবিষ্যতে এটি দর্শকদের আকর্ষণ করবে এবং ননি গাছের বীজ থেকে বংশধররা ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন স্থানে।
বাংলা একাডেমির সহ-পরিচালক ও স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না গাছটির বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন।
তিনি জানান, ননি একটি ছোট চিরসবুজ গাছ, যাকে মরিন্ডা, হুরদি, সুরঙ্গী, রং-কাঁঠাল, দারুহরিদ্রা, হলুদ কুঁচ নামে ও ডাকা হয়। গাছটির উচ্চতা ৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। পাতাগুলো বড় ও ডিম্বাকৃতির এবং ডালের ওপর জোড়া জোড়া থাকে। ফলের স্বাদ কিছুটা তিতা, বীজ থেকে বংশবিস্তার হয়। প্রাচীনকাল থেকে কাপড়ে রং করার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং ত্বকের রোগ সারাতেও সাহায্য করে। বীজের তেল জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে।
ননি ফলের ফুল সাদা এবং নলাকৃতির, ফলটি ডিম্বাকৃতির, সবুজ থেকে হলুদ হয়ে যায় এবং তীব্র গন্ধ বের হয়। ফলের মিষ্টি শাঁস থাকলেও গন্ধের কারণে কেউ সহজে খেতে চায় না। দুর্ভিক্ষপূর্ণ এলাকায় এটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের জলবায়ু ননি চাষের জন্য উপযুক্ত। স্থানীয় উপজাতিরা শিকড় ও কাণ্ডের রস প্রস্রাবজনিত সমস্যায় ব্যবহার করে থাকে।
চিকিৎসকদের মতে, হাড়ের ব্যথায় ভুগা রোগীদের জন্য ননি ফল খুবই উপকারী। প্রতিদিন ননি ফলের শরবত খেলে ব্যথা ও সর্দি-কাশির উপশম পাওয়া যায়। হাঁটুর যন্ত্রণায় ও আর্থ্রাইটিসে ভোগা রোগীদের জন্যও এটি উপকারী। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ননি ফল শক্তি বৃদ্ধি করে, এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, বি গ্রুপের ভিটামিনসহ ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, কপার ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ।
কাঁঠালের মতো যৌগিক ফল ননি, যা বিভিন্ন উপজাতি চিকিৎসায় ব্যবহার করে থাকে। কিছু উপজাতি এই গাছকে বটতিতা নামে চেনে। প্রায় এক দশক আগে আফ্রিকা থেকে এই গাছের বীজ আনা হয়েছিল। রংপুরের বিভিন্ন নার্সারিতে ও বৃক্ষমেলায় এই গাছের চারা পাওয়া যায়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta