ঢাবির প্রাক্তন উপাচার্য ড. আরেফিন সিদ্দিক আর আমাদের মাঝে নেই।
বাংলাদেশ মাদক চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুটগুলির প্রভাবে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হয়ে উঠেছে, বিশেষত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল, গোল্ডেন ওয়েজ, গোল্ডেন ভিলেজ ও গোল্ডেন ক্রিসেন্ট থেকে মাদকের প্রবাহের কারণে। ভারত এবং মিয়ানমার থেকে ভয়ঙ্কর মাদক ঢুকছে দেশটিতে। জল, স্থল এবং আকাশপথে দ্রুত গতিতে মাদক আসছে, এবং নতুন নতুন মাদক সেবন করার দিকে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। এর ফলে, শহর, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা সবখানেই মাদক ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ফেনসিডিল, ইয়াবা, কোকেন, ক্রিস্টাল মেথ-আইস, কুশ, খাট, ডিওবিসহ সব ধরনের মাদক পাওয়া যাচ্ছে, এবং অনেক সময় হোম ডেলিভারির মাধ্যমে তা সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের মধ্যে এটি একটি বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও, বেসরকারি সংস্থা মানসের মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, যার মধ্যে ১ কোটি মানুষ মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মানুষ মাঝে মাঝে মাদক সেবন করে। নারী মাদকসেবীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং তরুণরা সবচেয়ে বেশি মাদক গ্রহণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মাদক ব্যবহারকারীরা মোটের ৮০ শতাংশ। মাদক চোরাচালানে শিশু ও মহিলাদের ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৭৫ শতাংশ মাদকসেবী, অর্থাৎ প্রতি ১২ জনে একজন মাদকসেবী। এক একজন মাদকসেবী বছরে গড়ে ৫৬ হাজার টাকা মাদকের পিছনে খরচ করে, যার ফলে বছরে মোট প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা মাদকের ব্যবসায় চলে যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৬৭৫ জন মাদকাসক্ত। এই সময়ে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৫ বছর বয়স বা তার কম বয়সী মাদকসেবীদের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের উদ্ধার করা মাদক, আসামি এবং মামলা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৫টি মামলায় ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। উদ্ধার করা মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১ কোটি ৩২ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৮ বোতল ফেনসিডিল এবং ৩২ লাখ ৮ হাজার ৪২৭ বোতল বিদেশি মদ।
মানসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি, যার মধ্যে ১ কোটি মাদকাসক্ত। মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশ পুরুষ এবং ২০ শতাংশ নারী। ৮০ শতাংশ মাদকাসক্ত অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, এবং সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত ৩০ শতাংশ চালক মাদকসেবী। নারীদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। মাদক মাফিয়া চক্র বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক ছড়িয়ে দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। মাদক সব ধরনের অপরাধের উৎস, যার মধ্যে খুন, ধর্ষণ, পারিবারিক কলহ এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রধান। বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুস সালাম জানান, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি, এবং মাদক সেবনে ও নেশায় দৈনিক খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা, যা বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta