সশস্ত্র বাহিনীকে সব ধরনের বিতর্কের বাইরে রাখতেই হবে
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক ও সার্বভৌমত্বের রক্ষক। এটি আমাদের গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান। তাই সশস্ত্র বাহিনীকে যে কোনো বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। বাহিনীকে বিতর্কিত করা হলে দেশের অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। সবার আগে আমাদের দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি যে বিভিন্ন মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক ছড়ানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনী নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং নেতিবাচক আলোচনার মাধ্যমে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে। সেনাপ্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। এমন বিতর্ক দেশের ঐক্য নষ্ট করে এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকির সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত। সম্প্রতি সেন্ট্রাল আফ্রিকার বিদ্রোহ দমনে বাহিনীর কমান্ডাররা সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আফ্রিকায় সফর করে বাহিনীর কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে গৌরব অর্জন করেছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সংকটে সশস্ত্র বাহিনী সবসময় জনগণের পাশে থেকেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা বাহিনী সবসময় জনগণের স্বার্থ রক্ষা করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়ও বাহিনীর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সেনাবাহিনী কখনো জনগণের প্রতিপক্ষ হয়নি বরং শান্তিপূর্ণ সমাধানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু কিছু মহল বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছে, যা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের কিছু মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তিনি সেনাবাহিনী নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অনভিপ্রেত। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কাজ মানবাধিকার সংরক্ষণ করা, কোনো দেশের সেনাবাহিনী সম্পর্কে মন্তব্য করা তাদের এখতিয়ারে পড়ে না।
ভলকার তুর্কের মন্তব্যের পর আইএসপিআর সঠিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো বার্তা পায়নি। আইএসপিআর বলেছে, সেনাবাহিনী সবসময় আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা অগ্রহণযোগ্য।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই জনবিরোধী অবস্থান নেয়নি। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার পতন কিংবা ২০০৭ সালের রাজনৈতিক সংকটেও বাহিনীর ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণেই জনগণের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। বাহিনী জনগণের প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী সর্বপ্রথম সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে দেশের মানুষ তাদের প্রতি আস্থা রাখে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সশস্ত্র বাহিনীকে সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা। কারণ, বাহিনীকে বিতর্কিত করলে আমাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
অদিতি করিম : নাট্যকার ও কলাম লেখক
Email : [email protected]
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta