সাক্ষাৎকার: ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, অপরাধী যে পরিচয়ই হোক না কেন, তারা কোনভাবেই ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যে পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। রবিবার রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি পুলিশ সদস্যরা অপরাধ করে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ডিএমপি শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে এবং ফ্যাসিবাদী আমলে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন, দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। থানায় সেবা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি এবং আইনশৃঙ্খলার অন্যান্য বিষয় নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ বিভাগে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। শেখ সাজ্জাত আলী ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ১৯৮৪ সালে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পুলিশ কমিশনার বলেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর আমরা দেখতে পেয়েছি যে, পুলিশ ছাড়া সমাজ কেমন হতে পারে। সারা দেশে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি বাড়ছিল, তবে সম্প্রতি আমরা এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছি। পুলিশের দীর্ঘদিনের আচরণে পরিবর্তন আনার জন্য সময়ের প্রয়োজন এবং সকল কর্মকর্তার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ৪০ হাজার পুলিশ সদস্যকে একসাথে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তবে প্রশিক্ষণ চলছে। ঢাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব এবং এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। শেখ সাজ্জাত আলী আরও বলেন, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট কাজ করছে এবং থানায় সেবা মান উন্নত করতে সিটিজেন ফোরাম গঠন করা হবে।
কমিশনার বলেন, গত জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর পুলিশ প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পুলিশ সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তবে গত ৫-৬ মাসের কঠোর পরিশ্রমের পর তারা ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং তাদের মনোবল ফিরে এসেছে। চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে, যার ফলে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য শপিংমল ও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তায় অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণ রাস্তায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ছোটখাটো দাবি নিয়ে আন্দোলন। এতে ট্রাফিক ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি সবার কাছে অনুরোধ করেছেন, তাদের দাবির সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করতে। পুলিশ সদস্যরা যদি কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত হন, তবে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। গুলশানের ওসির বিরুদ্ধে কালক্ষেপণ করে মামলা না নেওয়ার কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কমিশনার বলেন, বর্তমানে ছিনতাইয়ের ঘটনা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, এবং এসব অপরাধে জড়িত বেশিরভাগ মাদকাসক্ত তরুণ। ২০-২২ বছর বয়সী ছেলেরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে এসব অপরাধে জড়াচ্ছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা বাস বা প্রাইভেটকারে কথা বলার সময় বেশি ঘটে। তিনি সতর্কতা জারি করে বলেন, যদি সবাই মোবাইল ও ব্যাগ নিরাপদে রাখেন, তবে এ ধরনের অপরাধ কমানো সম্ভব। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এবং ডিবি পুলিশকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta