পকেটমার থেকে শতকোটি টাকার মালিক
ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ভূমিদস্যুতার মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন মিন্টু এখন শত শত কোটি টাকার মালিক।
জুলাই বিপ্লবের পর সহিংসতার মামলায় আত্মগোপন করা মিন্টু তার স্ত্রীকে দিয়ে সম্পদ লুকাতে চেষ্টা করেছিলেন। ভৈরব থানার কাছে তার বিশাল বাড়ি ছিল, যা প্রতিপক্ষদের নির্যাতনের ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিত ছিল।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন মিন্টু প্রথমে পকেটমার ও ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে ভূমিদস্যুতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে তার সম্পদের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা হয়ে ওঠে।
মিন্টু ১৪ বছরের মধ্যে হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক নারী বলেন, মিন্টু মন্ত্রী-এমপিদের ভোগ বিলাসের জন্য সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে যেতেন এবং তার প্রভাব খাটিয়ে অপরাধে লিপ্ত থাকতেন। ভুক্তভোগীরা জানান, মিন্টু ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভৈরব বাজার রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারী ও পকেটমার হিসেবে পরিচিত ছিল।
ভৈরব বাজারের এক বাসিন্দা জানান, মিন্টু প্রথম দিকে মদ-গাঁজা সেবন করে ভৈরব বাজারে ছিনতাই করত এবং একাধিকবার গণপিটুনির শিকার হয়েছিল।
মিন্টু ১৯৯৫ সালে লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. মনির হোসেনের ১৩০ শতক জমি জোর করে দখল করে নেয়। পরে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হলে পুলিশ মামলা নেননি।
শিরিনা বেগম নামে এক নারী জানান, মিন্টু তার স্বামীর কাছ থেকে ৩৫ শতক জমি দখল করে রিসোর্ট বানিয়েছে। সেই সময় তার স্বামীকে মিন্টুর বাহিনী অত্যাচার করে।
আরেক ভুক্তভোগী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, মিন্টু জিল্লুর পুত্র পাপনের প্রভাব ব্যবহার করে একাধিক অপরাধ করেছিল। তিনি তার তেলের পাম্পও দখল করেছিল।
তিনি আরও জানান, মিন্টু তাকে জোরপূর্বক একটি স্বাক্ষর করিয়ে নিত। আরেক ভুক্তভোগী রাজু আহাম্মেদ জানালেন, মিন্টু তার ২০০ শতক জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে।
মিন্টু ২০০৫ সাল থেকে মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর তার উত্থান আরও দ্রুত হয়।
মিন্টু বর্তমানে ভৈরব থেকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত এবং অসংখ্য একর জমি দখল করে বিলাসবহুল প্রকল্প তৈরি করেছে। তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে একটি ডকইয়ার্ড দখল করার অভিযোগ ওঠে।
মিন্টু আরও অভিযোগে অভিযুক্ত, তার বিরুদ্ধে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। তিনি প্রায় ২০০ একর জমি দখল করে নানা ব্যবসা শুরু করেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মিন্টু বহু মানুষকে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ফেলে লাশ গুম করেছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পেত না।
অবশেষে মিন্টু এক সময় আত্মগোপন করে, কিন্তু এখনও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রভাব অব্যাহত রয়েছে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta