উদ্বিগ্ন জনগণ বিব্রত সরকার
পুলিশের পুনরুদ্ধারের জন্য নেয়া উদ্যোগগুলো ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এর পরিবর্তে একটি গোষ্ঠী বারবার পুলিশ বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছে। তারা এখনো পুলিশকে ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচারের সহযোগী বলে চিহ্নিত করছে। থানা কমপ্লেক্সেও দুর্বৃত্তরা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি ঘটনার পর গোয়েন্দা ব্যবস্থার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এখনও সমাজের সচেতন মানুষের সহযোগিতা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এই সুযোগে দেশি-বিদেশি অপশক্তি এবং দুর্বৃত্তরা তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুলিশকে সক্রিয় না করলে দেশের নাগরিকরা এর মাশুল দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং নিরাপত্তাহীনতা অব্যাহত থাকবে। সাধারণ মানুষের উচিত পুলিশকে সহায়তা প্রদান করা, এবং পুলিশকে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
গত সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর পল্লবী থানায় ঢুকে আবদুর রাজ্জাক ফাহিম নামে এক যুবক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামসহ তিন পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা করেন। পরে থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা ফাহিমসহ তার তিন সঙ্গীকে আটক করেন। পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন ইউনিটে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় তিন ছাত্রের আটকের প্রতিবাদে থানায় ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা হয়, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসনকে স্তম্ভিত করে।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছে। এজন্য পুলিশকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। সমাজের বিভিন্ন স্তরের সচেতন মানুষকে পুলিশিংয়ে যুক্ত করা উচিত। পুলিশ কেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না, তা চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উচিত হবে অধস্তনদের উদ্বুদ্ধ করা এবং মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। যদি এমন না হয়, পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’
গত মঙ্গলবার ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার ব্যানারে অংশগ্রহণকারীরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে যাত্রা করে। এক পর্যায়ে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একসময় পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে পদযাত্রীরা এগিয়ে যেতে থাকে। এ সময় কর্তব্যরত এক কর্মকর্তার পোশাক ছিঁড়ে ফেললে তিনি আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। এই ঘটনার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এদিকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর বলেন, ‘মঙ্গলবার পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ ঘটেছে। সেখানে বেআইনি সমাবেশ হয়েছে, যার শাস্তি হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা।’ মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দীন এলান বলেন, ‘প্রাক্তন সরকারের শাসনামলে পুলিশ বাহিনী ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বর্তমান সরকার তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা এবং তাদের পোশাক ছিঁড়ে ফেলা অনাকাঙ্ক্ষিত। সমাজের সচেতন মানুষকে পুলিশিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকরী হতে হবে এবং সরকারকে সহায়তা করতে হবে। ব্যর্থ হলে তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারের কাঠামোগত উদ্যোগ অপরিহার্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না, কিন্তু আইন না মানার সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।’
আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না : পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সমাজের সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পুলিশকে সহায়তা করুন। কাজের পরিবেশ তৈরি করুন, পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না। আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না।’
গতকাল সকালে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত শিল্পপুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজি) মো. ছিবগাত উল্লাহ। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার ড. মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ডিআইজি ইসরাইল হাওলাদার, ডিআইজি আবু কালাম সিদ্দিক, গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম, বিজিএমইএ’র প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
আইজিপি বাহারুল আলম শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট ও শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘গুজবে কান দেবেন না, আপনার কর্মস্থলকে ক্ষতি করবেন না। গুজব ছড়িয়ে কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করলে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta