রোহিঙ্গা সংকটে ত্রিমুখী বিপদ
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা বিষয়ক ত্রিমুখী চাপ দেখা যাচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি না রাখায় প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহায়তা আসছে না, ফলে রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে আর্থিক খাতের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় সরকার এ খাতের ব্যয় মেটাতে সমস্যায় পড়ছে। খাদ্য সহায়তা কমানোর ফলে রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে কাজের সন্ধানে চলে যাচ্ছেন। এর ফলে তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন এবং ক্যাম্পের ভেতরেও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। মাদক চোরাচালান, হত্যাকাণ্ডসহ নানা ভয়ঙ্কর অপরাধ ক্যাম্পে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্থানীয় পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া আর্থিক সহায়তা কমে যাচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের ওপর বিকল্প অর্থের চাপ বাড়ছে, যা অর্থ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এই বিষয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘এখন রোহিঙ্গারা যা পাচ্ছেন, তা যথেষ্ট নয়। নতুন বরাদ্দ কমে গেলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। তিনি আরও জানান, আগামী এপ্রিল থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু সহায়তা কমিয়ে ৬ ডলারে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য উন্নয়ন সহযোগীরা কাঙ্ক্ষিত সহায়তা দিচ্ছে না। আমেরিকা ও চীন ৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশ বা অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে, জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা ডব্লিউএফপি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য বরাদ্দ ১২.৫ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। এই উদ্যোগের ফলে কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, ‘আমরা জানি শরণার্থীরা সম্পূর্ণভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল, ফলে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং শিবিরে অস্থিরতা বাড়তে পারে। তবে যাদের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছিল, তারা তা দেয়নি, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ এর আগে ২০২৩ সালে খাদ্য সহায়তা ৮ ডলার কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে সেখানে ক্ষুধা এবং অপুষ্টির পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিছু সময় পর খাদ্য বরাদ্দ আবার পূর্বের স্তরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিদেশি সহায়তা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল, কিন্তু পেয়েছে মাত্র ৪৪০ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালের জন্য ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হলেও পাওয়া গেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালে ১ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে, তবে তা কতটা পাওয়া যাবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর জন্যও দাবি জানিয়েছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না, এবং এর কারণ হিসেবে বৈশ্বিক সংকটকে দায়ী করা হয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta