ইসরায়েলের ‘হিট লিস্ট’: কাতারসহ বিদেশে অবস্থানকারী হামাস নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা
ইসরায়েল আবারও বিদেশে হামাস নেতাদের টার্গেট করে তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। এদিকে, আগামী সপ্তাহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে অংশ নেবেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সম্প্রতি জানিয়েছেন, কাতারে অবস্থানরত হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য খালিল আল-হাইয়াসসহ একাধিক শীর্ষ নেতা তাদের ‘টার্গেট লিস্টে’ রয়েছে।
তাঁর পাশাপাশি গাজা ভিত্তিক হামাসের সামরিক শাখার কমান্ডার ইজ্জ আল-দীন আল-হাদ্দাদকেও তারা হত্যার হুমকি দিয়েছে।
মারিভের প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসরায়েলের হাতে একটি ‘হামাস হিট লিস্ট’ রয়েছে, যেখানে লেবাননে অবস্থানরত হামাস মুখপাত্র ওসামা হামদান, আলজেরিয়ায় দলের প্রতিনিধি সামি আবু জুহরি এবং কাতারে অবস্থানরত খালিল আল-হাইয়াস নাম রয়েছে।
হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক শাখা আলাদা। ২০১২ সাল পর্যন্ত দলটির রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার দামেস্কে। গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তারা সিরিয়া ছাড়িয়ে কাতারে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
দ্য টাইমস জানায়, কাতারে হামাস নেতাদের ব্যক্তিগত অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে শুরা কাউন্সিলের প্রধান মুহাম্মদ ইসমাইল দারবিশ এবং রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য জাহের জাবারিন রয়েছেন, যদিও মিডল ইস্ট আই এ তথ্য যাচাই করতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতার
যদি কাতারে হামাস নেতাদের হত্যা করা হয়, তা ইসরায়েলের জন্য বড় কূটনৈতিক ঝামেলা হতে পারে, কারণ সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ঘাঁটি আল-উদেইদ অবস্থিত।
সম্প্রতি ইরানের একটি পাল্টা হামলায় এই ঘাঁটিটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণের পরে তেহরানের এই প্রতিশোধ নেয়া হয়।
কাতার ও মিশর যুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে। এ বছরের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন হামাসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছিল, যা ছিল পুরোনো নীতির থেকে ভিন্ন, এক মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিক মুক্তির জন্য।
বিদেশে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস
নেতানিয়াহু অতীতে আমেরিকায় অবস্থানকালে কয়েকটি সফল সন্ত্রাসী অপারেশন করেছেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পর ইসরায়েল হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে। একই বছরের জুলাইয়ে কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার সময়ে ইরানের তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহকেও হত্যা করা হয়।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ইসরায়েল অনেক শীর্ষ হামাস নেতাকে গাজায় হত্যা করেছে। গত মে মাসে হামাস সামরিক শাখার সাবেক প্রধান মুহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়।
তার ভাই, হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ার ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিলেন। এক বছর অনুসন্ধানের পরে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে রাফায় গোপন সংঘর্ষে তিনি নিহত হন।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা ও বাধা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
তবে ইসরায়েলি চ্যানেল ১৪ জানিয়েছে, এই যুদ্ধবিরতির সাথে যুক্তরাষ্ট্র একটি “গোপন সাইড লেটার” রেখেছে, যেখানে ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করতে পারবে।
দুই আরব কূটনীতিক টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে গাজায় নতুন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ ব্যবস্থাটি।
হামাস চায়, আগের মতো জাতিসংঘের মাধ্যমে সাহায্য সরবরাহ হোক।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta