বিয়ে বাড়িতে বরপক্ষকে উদ্ধার করতে গিয়ে ওসিও অবরুদ্ধ!
'গেটের টাকা' এবং 'নরম ভাত' নিয়ে উত্তেজনা, ধাক্কাধাক্কি ও ভাঙচুরের ফলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বরপক্ষের সদস্যরা কনের বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজেও অবরুদ্ধ হন। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং ওসিসহ অন্যদের উদ্ধার করা হয়।
রোববার (৬ এপ্রিল) সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গাইবান্ধা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. ওয়াজেদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটী ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটী হাজিপাড়া গ্রামে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পরদিন শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কনের বাড়িতে বরপক্ষের সদস্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসিও অবরুদ্ধ হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পশ্চিম ছাপড়হাটী হাজিপাড়া গ্রামের প্রবাসী মো. দুখু মিয়ার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে পাশের রামজীবন ইউনিয়নের মো. আয়নাল হকের ছেলে মো. সবুজ সরকারের (২৮) বিয়ে হচ্ছিল। শুরু থেকেই 'গেটের টাকা' নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। এরপর খাবার পরিবেশনের সময় ভাত নরম হওয়ায় বরপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে ভাতের প্লেট ছুড়ে ফেলে এবং চেয়ার ভাঙচুর করে।
কনের বাবার অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে থাকা কনের জ্যাঠা পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে বরপক্ষের কিছু সদস্য তাঁর সঙ্গে হাতাহাতি করে। স্থানীয়রা এসে বরযাত্রীদের কিছু অংশকে পালাতে সাহায্য করে, তবে কয়েকজনকে আটক করা হয়।
পরদিন শুক্রবার, আটক হওয়া বরপক্ষের সদস্যদের পরিবারের পক্ষ থেকে সুন্দরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, রাতে ওসি মো. আবদুল হাকিম আজাদের নেতৃত্বে পুলিশ উদ্ধার অভিযানে যায়, তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কনে পক্ষের লোকজন পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়ে এবং একপর্যায়ে ওসিকেও অবরুদ্ধ করে ফেলে।
ওসি পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন, কিন্তু সেখানেও তাঁকে ঘিরে রাখে উত্তেজিত কনে পক্ষের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওসিসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. ওয়াজেদ হোসেন বলেন, ‘ওসি সাহেব ফোন করেছিলেন, আমরা দায়িত্ববোধ থেকে ঘটনাস্থলে যাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা আমাদের কাজ। গিয়ে ওসিসহ সবাইকে উদ্ধার করি। তবে এলাকাবাসী আমাদের কথা শোনেনি। এমন আচরণ খুবই দুঃখজনক।’
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘বিয়ের বাড়িতে মামলার ভুক্তভোগী তিনজন আটকা ছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করতে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়।
আমি পেছনে পড়ে গিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই। পরে ওই বাড়িটিও ঘিরে ফেলে উত্তেজিত জনতা।’
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta