ইসলামি নির্দেশনায় সংবাদ পরিবেশন
আল্লাহ সুরা বাকারার ৪২ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘এবং মিথ্যা এবং সত্যকে একে অপরের সঙ্গে মেশাও না, আর জেনে-বুঝে সত্য গোপন করো না।’ রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মিথ্যা সংবাদ প্রচার, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবিরা গুনাহ’ (বুখারি ও মুসলিম)। আল কোরআন ও হাদিসে মুমিনদের সত্যনিষ্ঠ হওয়ার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অবশ্যই পালনীয়। সংবাদ পরিবেশনে সত্য গোপন করা এবং মিথ্যাচার করা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ, তাই এটি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা উচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে, সাংবাদিকতা এবং সংবাদ পরিবেশনা মূলত সত্য প্রকাশের মাধ্যম। ইসলামি নির্দেশনাগুলি সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি অবশ্য পালনীয় নীতি হওয়া উচিত। আল কোরআন মানবসমাজকে সত্য জানাতে নাজিল হয়েছে। আদম (আ.) থেকে রসুল (সা.) পর্যন্ত সকল নবী-রসুল মানুষের পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁদের মূল কাজ ছিল সত্যের বার্তা প্রচার করা। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে, এটা একটি অনুসরণীয় নীতিমালা। আজকের সংবাদমাধ্যমের সবার উচিত আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশনা মেনে চলা। এই ঐশী নির্দেশনা সংবাদ পরিবেশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের মূল দায়িত্ব হলো সঠিক তথ্য তুলে ধরা এবং জনগণকে অবহিত করা। সঠিক সংবাদ পরিবেশন দেশের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়ক। সুরা হুজুরাতের ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই-বাছাই করো, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতি না করে ফেলো এবং পরে আফসোস না করতে হয়।’ কোরআন সংবাদ পরিবেশনে প্রতারণা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘বল, আমি তোমাদের বলি না যে আল্লাহর ধনভান্ডার আমার কাছে আছে, কিংবা অদৃশ্য আমি জানি না, কিংবা আমি ফেরেশতা।’ (সুরা আনআম-৫০)। কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘ভালো এবং মন্দ কখনো এক হতে পারে না। মন্দকে উৎকৃষ্টতার মাধ্যমে প্রতিহত করো। ফলে তোমার সঙ্গে শত্রুতা থাকা কেউ হয়ে উঠবে তোমার প্রিয় বন্ধু।’ (সুরা হা-মিম সাজদা-৪১)। রসুল (সা.) যেকোনো খবর খুব ভালোভাবে যাচাই করতেন। একবার, জাকাত সংগ্রহ করতে গিয়ে এক ব্যক্তি মিথ্যা সংবাদ দেয় যে, ওই অঞ্চলের লোকেরা মুরতাদ হয়ে গেছে। রসুল (সা.) তা যাচাই করতে খালিদ বিন ওয়ালিদকে পাঠান, এবং খালিদ রাতে উপত্যকা অবরোধ করে পরবর্তীতে জানতে পারেন, মিথ্যা সংবাদ দেওয়ার কারণে প্রকৃত পরিস্থিতি ভুল ছিল। রসুল (সা.)-এর বিচক্ষণতা এবং প্রকৃত সংবাদ যাচাইয়ের কারণে বিপর্যয় থেকে ওই অঞ্চল রক্ষা পায়।
লেখক : সভাপতি, আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
বিডি প্রতিদিন/এমআই
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta