"জনতার বাংলাদেশ পার্টি" ২০ দফা দাবি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে
তারুণ্যের শক্তিতে আইনজীবীদের উদ্যোগে- জনতার বাংলাদেশ পার্টি হোক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে - এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০ দফা দাবিসহ নতুন রাজনৈতিক দল "জনতার বাংলাদেশ পার্টি" আত্মপ্রকাশ করেছে।
দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম সবুজ খানের নেতৃত্বে আইনজীবীদের উদ্যোগে আজ ১৩ই মার্চ ২০২৫, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকার আব্দুস সালাম হলে এই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক সঞ্চালনায় এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান এর গঠনমূলক বক্তব্যে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম সবুজ খান তার মূল বক্তব্যে বলেন, আজ জনতার বাংলাদেশ পার্টির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে বীজ রোপণ করা হলো, যা একদিন পুরো দেশকে সুগন্ধে ভরে দেবে। তার মূল লক্ষ্য হলো একটি সুস্থ, সুন্দর, মানবিক এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে সকলের, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষের। এই দেশ ফ্যাসিবাদের নয়, এটি জনতার বাংলাদেশ হবে।
তিনি আরও বলেন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতা বাংলাদেশকে প্রকৃত বাংলাদেশ হিসেবে ফিরিয়ে আনতে জীবন দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। তবে, বর্তমান প্রজন্ম কোন বাংলাদেশে বাস করবে? ক্ষমতার নয়, জনতার বাংলাদেশ হবে।
ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে জনগণের পাশে দাঁড়ালে দেশ উন্নতি করবে, তিনি দাবি করেন। জনগণের বাংলাদেশ পার্টি জনতার পাশে থাকবে, ক্ষমতার নয়। তিনি বলেন, পুলিশের উচিত জনগণের সুরক্ষা করা, ক্ষমতার নয়। পুলিশ সরকারী, কোনো দলের নয়, জনগণের সেবা করবে।
বর্তমান পুলিশ কার্যক্রমে দুর্বলতা রয়েছে, ফলে অপরাধীরা দেশকে অস্থির করে তুলছে। পুলিশ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক, নইলে নিরপেক্ষ পুলিশ নিয়োগ করতে হবে। জনগণের বাংলাদেশ পার্টি রাজনীতিতে টাকার প্রভাব ঘৃণা করে, সততা, আদর্শ এবং যোগ্যতা সম্মানিত করতে চায়।
রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। আমরা ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, নইলে দেশ আরও পিছিয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয় না করে, নবী-রাসুলের নির্দেশনা মানে না, সে কখনও আদর্শ নেতা হতে পারে না। ব্যক্তিগত লাভের জন্য কাজ করা দেশের লাভের নয়। আমরা আর কতদিন টাকা দিয়ে নেতা তৈরি করবো? আমাদের চরিত্র এখন মিথ্যার মতো হয়ে গেছে।
আগামী নির্বাচনে আমরা ২০০ আসনে আইনজীবী প্রার্থী দেব এবং বাকি ১০০ আসনে অন্যান্য পেশাজীবীদের প্রার্থী করব। রাজনীতিতে টাকার প্রভাব নির্মূল হোক, সততা এবং যোগ্যতা প্রশংসিত হোক।
জনতার বাংলাদেশ পার্টি টাকার রাজনীতি নয়, যোগ্যতার রাজনীতি করতে চায়। আমরা মিথ্যার বদ্ধভূমিতে দাঁড়িয়ে সত্যের জয়গান করতে চাই।
জনতার বাংলাদেশ পার্টি ২০ দফা দাবি নিচে তুলে ধরেছে:
১। যানজট নিরসন।
২। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
৩। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।
৪। কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
৫। মাদকদ্রব্য নির্মূল।
৬। সুশিক্ষা বা নৈতিক শিক্ষার প্রসার।
৭। দেশের প্রান্তিক এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
৮। দুর্নীতি রোধ।
৯। মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক জীবনযাপন।
১০। বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা।
১১। নিরাপদ বাসযোগ্য ভূমি।
১২। রাজনীতিতে টাকার প্রভাব ও পেশিশক্তি কমিয়ে মেধাবিদের অগ্রাধিকার।
১৩। মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা।
১৪। কৃষিকে উৎসাহিত করা বা কৃষি বিপ্লব।
১৫। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও সুস্থ মালিক সম্পর্ক বৃদ্ধি।
১৬। ইসলামি ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
১৭। জনসংখ্যাকে প্রকৃত মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা।
১৮। দেশকে উৎপাদনমুখী করা।
১৯। প্রশাসনকে শক্তিশালী করে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠন।
২০। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখা।
সভাপতি আরও বলেন, এই অসুস্থ সমাজকে ৭ মাসে বদলে দেওয়া সম্ভব, যা যুগ যুগ ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। আইন-আদালত এবং আইন-শৃঙ্খলার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। জনতার বাংলাদেশ পার্টির স্লোগান ও উদ্দেশ্য:
২৬ মে ২০২১ সালে জনতার বাংলাদেশ পার্টির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সেবা করা, করোনা, বন্যা, দুর্যোগে শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হতে হয়। কিন্তু জনতার বাংলাদেশ পার্টি বাধা অতিক্রম করে দেশের মানুষের পাশে ছিল। এখন জুলাই-২০২৪ বিপ্লবের পর ফ্যাসিবাদী সরকার বিদায় নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। জনতার বাংলাদেশ পার্টি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশে আমাদের ইতিহাসে মৃত্যুর গল্প রয়েছে। '৭১ থেকে '২৪ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের জীবন দিতে হয়েছে। বারবার আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি। দেশের প্রয়োজনে এখনও আমরা উঠবো। যতদিন না আমরা শান্তির পরিবেশ তৈরি করতে পারি, ততদিন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে। জনতার বাংলাদেশ পার্টি সত্য তুলে ধরবে, রাজনীতিতে টাকার প্রভাব নির্মূল করার চেষ্টা করবে, যতই কঠিন পরিস্থিতি হোক।
আইনজীবীরা সমাজের দর্পণ। সমাজের অনুভূতিকে অনুধাবন করে, মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে রাজনীতি হবে। টাকার প্রভাব বন্ধ হোক, এবং রাজনৈতিক দুর্নীতি বন্ধ করা হোক।
আমরা যদি সুযোগ পাই, বাংলার মাটিতে আর কোনো ভাড়াটিয়া থাকবে না। আমি সরকারকে ট্যাক্স দেই, আমার ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়, তাহলে কেন আমি ভাড়া থাকব? আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি, প্রত্যেক পরিবারকে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করব। ইনশাল্লাহ, কেউ গৃহহীন থাকবে না।
এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। গুলিস্তান থেকে রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ, গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। যদি আপনারা আমাদেরকে সুযোগ দেন।
মুনতাসির/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta