মহাবিশ্বের আরও বিস্তারিত জানতে তৈরি হচ্ছে বৃহৎ ডিজিটাল ক্যামেরা
মহাবিশ্বকে আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ক্যামেরা নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের এইচডি ভিডিও ধারণ করা যাবে, যা এর খুঁটিনাটি বিশ্লেষণে সহায়তা করবে।
এই বছরেই বিজ্ঞানীরা চিলির অরা অবজারভেটরিতে ক্যামেরাটি স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আয়না ৮.৪ মিটার আকারের এবং নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ল্যাক গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে।
চিলির অরা অবজারভেটরির ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেহান্দ্রো ফোইগ্ট বলেন, ‘বর্তমানে বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট কিছু পর্যবেক্ষণের জন্য নির্দেশনা দেন, কারণ তারা একটি নির্দিষ্ট তত্ত্ব যাচাই করতে চান। ফলে টেলিস্কোপটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থির রাখা হয়। তবে আমরা যা করছি, তা হলো, সম্পূর্ণ আকাশের চিত্র ধারণ। এই ছবি ও ভিডিও বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা ও বিশ্লেষণের জন্য সহায়ক হবে।’
ইতোমধ্যে ১৪৪ মেগাপিক্সেলের পরীক্ষামূলক ক্যামেরার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল সবাইকে বিস্মিত করেছে।
নতুন ক্যামেরাটি হবে ৩,২০০ মেগাপিক্সেলের, যা অভূতপূর্ব মানের ছবি ধারণ করতে সক্ষম। একটি মাত্র ছবি দেখানোর জন্য ৪০০টি আলট্রা এইচডি টিভি স্ক্রিন প্রয়োজন হবে।
অরা প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক পরিচালক স্টুয়ার্ট কর্ডার বলেন, ‘আমরা মহাবিশ্বের চিত্রায়ণে নতুন যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে সাদাকালো যুগ পেছনে ফেলে রঙিন ছবি থেকে সরাসরি এইচডি ভিডিওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
এই টেলিস্কোপটি স্থির চিত্র ধারণের পরিবর্তে দ্রুত গতির পর্যবেক্ষণের দিকে অগ্রসর হবে।
অরা অবজারভেটরির নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হ্যারনান স্টকব্রান্ড বলেন, ‘প্রতি রাতের সংগৃহীত ছবি বিশ্লেষণ করে সিস্টেমটি শনাক্ত করতে পারবে কোনো তারা বিস্ফোরিত হয়েছে কিনা, সুপার নোভা তৈরি হয়েছে কিনা বা কোনো তারা নিভে গেছে কিনা। এমনকি গ্রহাণুর মতো কোনো বস্তু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে কিনা তাও জানা সম্ভব হবে।’
বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, আমরা বর্তমানে মহাবিশ্বের মাত্র পাঁচ শতাংশ সম্পর্কে অবগত। নতুন এই ক্যামেরাটি কার্যক্রম শুরু করলে অবশিষ্ট ৯৫ শতাংশ সম্পর্কেও মূল্যবান তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চিলির অরা অবজারভেটরির ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেহান্দ্রো ফোইগ্ট বলেন, ‘এই আয়না ও ক্যামেরার সমন্বয়ে আমরা দূরবর্তী বস্তু কিংবা ক্ষীণ আলোর উত্স শনাক্ত করতে পারবো, যা সাধারণ টেলিস্কোপে দেখা সম্ভব নয়। যেহেতু এটি প্রতি রাতে উচ্চ গতিতে পর্যবেক্ষণ চালাবে, তাই এক দশকের তুলনামূলক বিশ্লেষণ সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে গ্রহ-নক্ষত্রের গতি, বিবর্তন, জন্ম ও বিলুপ্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।’
বিজ্ঞানীরা ক্যামেরাটি দ্রুত চালু করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta