অসম প্রতিযোগিতা বিমা খাতকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিমা আহরণের ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি অসম প্রতিযোগিতা চলছে। এটি প্রতিরোধের জন্য আমরা নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করবো। সাঈদ আহমদ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি, বলেছেন যে, এই অসম প্রতিযোগিতা বিমা খাতকে আরও সংকটে ফেলবে।
তিনি বলেন, বিমা খাতে কোনো ধরণের দুর্নীতি গ্রহণযোগ্য হবে না। আমি নিজে দুর্নীতি করবো না এবং অন্যদেরও দুর্নীতি করতে দেবো না।
রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক-এ তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন। সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূইয়ার সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
সাঈদ আহমদ বলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু বিমা খাত তা অনুসরণ করছে না। তিনি মনে করেন, দেশের বিমা খাতের আকার দেশের অর্থনীতির তুলনায় ছোট, এবং ৮০টি বিমা কোম্পানির সংখ্যা কম। বিমা খাত এখন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও সমন্বয় প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিমা খাতের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ, ১৯৭৩ সালে বিমা কর্পোরেশন আইনের মাধ্যমে পুনর্গঠন, এবং ১৯৮৪ সালে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর অন্তর্ভুক্তিকরণ। এই ধাপগুলো বাংলাদেশে বিমা খাতকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮০টি বিমা কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫টি জীবন বিমা এবং ৪৫টি সাধারণ বিমা প্রতিষ্ঠান। এরা সম্মিলিতভাবে প্রায় ১.৮৯ কোটি মানুষকে বিমার আওতায় এনেছে। তবে, বাংলাদেশে বিমার অবদান জিডিপির মাত্র ০.৫ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক কম। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এ হার যথাক্রমে ভারত ৪%, শ্রীলঙ্কা ১.২%, এবং পাকিস্তান ০.৮%।
বিআইএ সভাপতি জানান, বর্তমানে বিমা খাত নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যেমন কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং দেশের অর্থনীতির অস্থিরতা। এসব কারণে বিমা খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হয়নি।
তবে, তিনি উল্লেখ করেন, এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশে জীবন বিমা খাতে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ২০২৩ সালে ছিল ১১ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, এবং বেসরকারি জীবন বিমা খাতের লাইফ ফান্ড ছিল ৩২ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, শিল্পায়ন হচ্ছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গড় আয়ু বাড়ছে, কিন্তু বিমা শিল্প তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারেনি। বিমা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বিমার গুরুত্ব সম্পর্কে আরও শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিমালার সংস্কার চলছে, তবে কার্যকারিতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য আরও সমন্বয় দরকার। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে গ্রাহকদের সহজে বিমার আওতায় আনা উচিত।
বর্তমান বিমা খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাঈদ আহমদ বলেন, জনগণের বিমা সম্পর্কে আস্থা বৃদ্ধি, সময়মতো দাবি পরিশোধ, এনজিও দ্বারা বিমার অধিকার রহিতকরণ, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের জন্য জীবন বিমা বাধ্যতামূলক করা, এবং বিমা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন করা উচিত।
প্রশ্নের জবাবে সাঈদ আহমদ বলেন, বিমা কোম্পানিগুলো সেবামূলক কাজ করছে, এবং সেবা প্রদানের নামে কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড হতে দেওয়া যাবে না।
অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জনগণের টাকা তছরুপ করা বিআইএ কোনোভাবেই সহ্য করবে না। তিনি আরও বলেন, বিমা খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পলিসি প্রণয়ন সরকারের দায়িত্ব। সরকার যদি বাধ্যতামূলক বিমা নীতিমালা করে, তবে খাতটির বিকাশ ঘটবে এবং জিডিপিতে এর অবদান বাড়বে।
আরএস
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta