ইফতারে জনপ্রিয় নওগাঁর পাতলা দই
নওগাঁবাসীর কাছে পাতলা দই এক বিশেষ ধরনের পানীয়। ইফতারে খেজুর, শরবত, ছোলা, পেঁয়াজুসহ নানা পদ থাকলেও পাতলা দই বা ঘোল ছাড়া তাদের ইফতার যেন অসম্পূর্ণ থাকে। যুগ যুগ ধরে রোজাদারেরা ইফতারে পাতলা দই খেয়ে অভ্যস্ত। সারাদিন রোজার পর এক গ্লাস ঠান্ডা পাতলা দই তৃষ্ণার্তদের দেহ ও মনে প্রশান্তি এনে দেয়।
রমজানের প্রথম দিন থেকেই নওগাঁ শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁ ও প্রসিদ্ধ দইয়ের দোকানগুলোতে ভিড় জমে। দুপুরের পর থেকেই দোকান ও ফুটপাতে মাটির হাঁড়িতে করে বিক্রেতারা পাতলা দই বিক্রি শুরু করেন। বিশেষ করে শহরের ব্রিজের মোড়, তাজের মোড়, সরিষাহাটির মাড়ে, গোস্তহাটির মোড়, দয়ালের মোড়ের ফুটপাত ও নামকরা দই-মিষ্টির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। এছাড়া অলিগলিতেও ফেরি করে দই বিক্রি হয়।
পাতলা দই কিনতে আসা শিক্ষক জাহিদ হোসেন বলেন, এটি সাধারণত দুই ধরনের মাটির হাঁড়িতে বিক্রি হয়। বড় হাঁড়ির দই ২০০-২২০ টাকায় এবং ছোট হাঁড়ির দই ১৬০-১৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি হাঁড়িতে ২০-৩০ টাকা বেশি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা।
ক্রেতা আশফাকুল ইসলাম বলেন, নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী এই দইয়ের জনপ্রিয়তা গরমে আরও বেড়ে যায়। এবার গরমের শুরুতেই রোজা হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেড়েছে। তবে দামের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।
লিটন ব্রিজ এলাকায় পাতলা দই বিক্রেতা সামছুল হক জানান, দুধ ও চিনির দাম বাড়ায় দই তৈরির খরচ বেড়ে গেছে, তাই তারা দাম কিছুটা বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
পাতলা দইয়ের প্রচলন নিয়ে নওগাঁর বিশিষ্ট কবি ও গবেষক আতাউল হক সিদ্দিকী বলেন, একসময় এটি "মাঠা" নামে বেশি পরিচিত ছিল। ষাট-সত্তরের দশকে ঘোষেরা লিটন ব্রিজ এলাকায় মাঠার হাঁড়ি নিয়ে বসতেন। প্রচণ্ড গরমে মানুষ সেই মাঠা খেতে ভিড় করত। তখন এক গ্লাস মাঠা ৫-১০ পয়সায় বিক্রি হতো। আশি-নব্বইয়ের দশকে শহরের কালীতলা ও চুড়িপট্টি এলাকার মিষ্টির দোকানগুলোতে টক দই বিক্রি শুরু হয়।
নওগাঁর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার আশীষ কুমার সরকার বলেন, যুগ যুগ ধরে মানুষ ঘোল বা মাঠা পান করে আসছে। এটি মূলত দুধের ননি থেকে মাখন আলাদা করার পর যে তরল অংশ থাকে, সেটাই ঘোল বা মাঠা। এতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা শরীরের জন্য উপকারী। এটি উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, পাশাপাশি হজমশক্তি উন্নত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta