৪৬১৫ রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
মশক নিধনে দুই সিটির বাজেট ২০০ কোটি টাকা
নিয়মিত ওষুধ ছিটায় না সিটি কর্পোরেশন
বৈজ্ঞানিক উপায়ে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব
শীত শেষ হওয়ার সাথে সাথে রাজধানীতে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরবাড়ি, দোকান, অফিস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ সর্বত্রই মশার আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশা নিধনের জন্য ২০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ থাকলেও, নাগরিকরা তেমন উপকার পাচ্ছেন না। মশা নিধনে নিয়মিত ওষুধ না ছিটানো এবং অপরিষ্কার পরিবেশের কারণে মশার সংখ্যা বাড়ছে। নানা পরিকল্পনা থাকলেও, দুই সিটি করপোরেশনের উদাসীনতায় মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জানাগেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা রয়েছে মশক নিধনে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ব্যয় ছিল ৮৭ কোটি টাকা, আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে এটি ১১১ কোটি টাকা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও প্রায় একই পরিমাণ বাজেট রাখা হয়েছে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য। তবে, এই বিপুল পরিমাণ ব্যয়ের পরও নগরবাসী তেমন সুফল পাচ্ছেন না।
রাজধানীর কিছু এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। বাসাবাড়ির গৃহিণীরা মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে সন্ধ্যায় মশারি টানিয়ে দেন। তবে মশা বৃদ্ধি পেলে কয়েলও কাজে আসে না।
মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা জোসনা আহমেদ জবা বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে মশক নিধনের কোনো কার্যক্রম এখন আর দেখা যায় না, ফলে মশার উপদ্রব বেড়েছে। মশারি টানিয়েও মশা থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন ফাঁকফোকরে মশা ঢুকে পড়ে এবং রাতের বেলা ঘুম নষ্ট করে।
বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ জানান, কিছুদিন ধরে এলাকায় মশার উপদ্রব এত বেড়েছে যে, বাসায় থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। রুমের মধ্যে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করলে মশা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে খাওয়া বা গোসলের সময় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে।
শনির আখড়ার বাসিন্দা আলেয়া খাতুন বলেন, এখানে সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটায় না। স্বাভাবিক সময়ে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করলে মশা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে মশার প্রজনন মৌসুমে এসব কাজ করে না। আমরা প্রায় এক মাস ধরে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ, তবে সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। খাল ও ডোবা পরিষ্কার করা হলে কিছুটা উপকার পাওয়া যেত।
পূর্বে মশক নিধনের দায়িত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর ছিল। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বেশিরভাগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পালিয়ে গেছেন, ফলে মশক নিধন কার্যক্রম তদারকি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থবির হয়ে পড়েছে। উত্তর সিটিতে নতুনভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রমে তারা তেমন সময় দিতে পারেননি, যার ফলে কর্মীদের মধ্যে উদাসীনতা দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের অধীনে মশক কর্মীরাও কাজ করছেন, যদিও আগের সময়গুলোর মতো সরাসরি তদারকি ছিল না।
মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে নারাজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তারা জানায়, পুরো ১০টি অঞ্চলে ৭৫টি ওয়ার্ডের কর্মীরা কাজ করছেন, তবে শহরের নিম্নাঞ্চলে মশার উপদ্রব বেড়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta