সুন্দরবনে আনন্দে ভরপুর গ্রুপ ট্যুর
সুন্দরবনে যাত্রা মানে একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজনও। বিশেষত গ্রুপ ট্যুরে পরিচিত ও একমনা সফরসঙ্গী নির্বাচনসহ নানা সতর্কতা মেনে চলা লাগে। আমাদের বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের এবারের সুন্দরবন গ্রুপ ট্যুরের প্রস্তুতি ছিলও তিন মাস দীর্ঘ, এবং অবশেষে সেই কাঙ্খিত দিনটি চলে আসল- ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪।
শুরুতেই বিপত্তি! আমাদের সেন্টমার্টিন বাসটি ১৯ তারিখ রাত ১২টায় পিকআপ স্থলে আসার কথা ছিল, কিন্তু জ্যামের কারণে তা আসতে পারেনি। কখন আসবে তাও ছিল অনিশ্চিত। তাই সফরসঙ্গী মো. শাহদুত এম মজুমদার ভাইয়ের সহায়তায় দ্রুত গ্রিনলাইনের একটি দ্বি-তল বাস ভাড়া করে খুলনা পোর্টের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি ১-২ ঘণ্টা দেরিতে। সাম্পানে যাত্রা বিরতির পর, ভোর ৬টায় খুলনা পোর্টে পৌঁছাই। সেখানে ফজর সালাত শেষে আমরা খুলনা-সুন্দরবন রুটের এমভি আলাসকা লাক্সারি জাহাজে ওঠার জন্য প্রস্তুতি নিই।
নাব্যতা সংকটের কারণে জাহাজ সরাসরি ঘাটে ভেড়াতে না পারায়, প্রতিটি জাহাজে পেছনের ছোট বোটে চড়ে ওঠা-নামার প্রক্রিয়া ছিল। তবে কোন সমস্যা ছাড়াই, অবশেষে জাহাজে উঠলাম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার কারণে জাহাজের ফ্লোরগুলো সবসময় পরিষ্কার থাকে।
জাহাজের কর্মীরা বাস থেকে সবার লাগেজ এবং কামরার চাবি বুঝিয়ে দিলেন। আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন সজ্জিত কামরায় ঢুকতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। কিছুটা বিশ্রাম নেয়ার পর, রুফটপ ডাইনিং-এ নাস্তায় অংশগ্রহণের ডাক এল। উল্লেখ্য, পুরো তৃতীয় তলায় ৩৪ সদস্যের আমাদের টিম ছিল। এটি ছিল এক প্রকার পরিবারভিত্তিক একটি ফ্যামিলি ট্যুর।
খুলনার ঐতিহ্যবাহী পশুর নদী ধরে জাহাজ চলতে শুরু করেছে, গন্তব্য ছিল সাগরপাড়ের কটকা ও জামতলি সিবিচ। বুফে নাস্তায় ছিল ফ্রেশ জুস, ব্রেড, বাটার, জেলি, হানি, পারাটা, নান, ছোলা ডাল, মিক্স ভেজিটেবল, ডিম অমলেট, মার্টুন নিহারি, কলা, এবং আনলিমিটেড চা ও কফি। নাস্তায় গল্প, হাস্যকর আলোচনা, এবং মজা ছিল প্রচুর।
তবে এর মধ্যে জাহাজের চলাচলে কিছু সময়ের জন্য মনোযোগ হারিয়ে গেলাম পশুর নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখে। এরপর, নদীটির বিভিন্ন শাখা পাড়ি দিয়ে আমরা উঁচু-নিচু সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে থাকলাম। দূরে উড়ে চলা পাখিরাও আমাদের চোখে পড়লো। রুফটপের খোলামেলা ডাইনিং এ এসব দৃশ্য দেখতেই স্ন্যাকস পরিবেশন করা হলো।
মধ্যাহ্ন ভোজের আগেই সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলাম, এবং কিছু গরম পানি ও শাওয়ার সুবিধায় অনেকেই বিশ্রাম নিলেন। গরমের মাঝে, বেশ কয়েকজন শিশু জাহাজের পেছনের সুইমিং পুলে বেশ দাপিয়ে খেললো।
দুপুরের খাবারে ছিল সবজি কারি, সি ফিশ, চিকেন মাসালা, বিফ ভূনা, ডাল ভূনা, ফিরনি, কোমল পানীয় ইত্যাদি। খাওয়া-দাওয়া চলাকালীন জম্পেশ আড্ডা, হাস্যরস এবং গল্পগুজব চলছিল।
জাহাজ প্রথমবারের মতো নোঙ্গর করলো আন্দারমানিক স্পটে, যেখানে গাইড আল আমিন মামা বনের ভিতরের বুনো পথ ধরে আমাদেরকে সুন্দরী গাছ, হরিণ এবং বাঘের বিচরণসহ বনের বিস্তৃতি বর্ণনা করলেন। এরপর, নদীতে বিকেল ও গোধূলির চমৎকার মুহূর্ত উপভোগ করা হলো।
বিকেলের স্ন্যাকস এবং চা কফি নিয়েও উপভোগ ছিল, এবং মেঘলা আকাশে সূর্যাস্তের দৃশ্যটা ছিল অসাধারণ। সন্ধ্যার পর বাচ্চারা খেলাধুলা করছিল, এবং বড়রা টেবিল টেনিস, দাবা ও অন্যান্য খেলা নিয়ে মজা করছিল।
রুফটপে গরম পিঠা খাওয়ার ডাক এলো। সেখানে মিষ্টি ভাপা পিঠার পাশাপাশি, স্পাইসি ভাপা পিঠাও ছিল বেশ সুস্বাদু।
ডিনারের পর, কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী ছিল। এরপর, গাইড আল আমিন মামা সুন্দরবন ট্যুরের শেষ দিন সম্পর্কে আমাদের অবহিত করলেন। সফরের শেষে সবাই নানা উপহার নিয়ে একসাথে ঘরে ফিরে যাই, স্মৃতিতে ভরপুর ছিল এই আনন্দময় তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমণ।
সবশেষে, আমাদের সহযাত্রীদের চোখের ইঙ্গিত থেকেই বোঝা যায় এই গ্রুপ ট্যুরের আনন্দ কতটা বিশেষ ছিল। ফটো ক্রেডিটঃ শাহাদুত ভাই।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta