পারভেজ কেন খুন হল
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে আলামিনের দোকানের সামনে পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন ও হাসছিলেন। তাদের পিছনে দাঁড়ানো ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী। ওই দুই ছাত্রী মধ্যে একজন ছিল পিয়াসের প্রেমিকা। সে মোবাইল ফোনে পিয়াসকে বিষয়টি জানায়। এরপর পিয়াস ও তার সঙ্গীরা আলামিনের দোকানে এসে ঝগড়া শুরু করেন। পিয়াস জুনিয়র হলেও পারভেজদের সঙ্গে অসভ্য আচরণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করলেও পিয়াস তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। এরপর পিয়াস এবং তার সহপাঠীরা পারভেজ ও তার বন্ধুদের ওপর আক্রমণ করে। এই ঘটনায় পারভেজ ছুরিকাঘাতে নিহত হন। হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ জানাচ্ছে, তারা ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের এক ছাত্রীকে খুঁজছে, যাকে ধরা হয়েছে এবং তার নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। পিয়াসের প্রেমিকা এই ছাত্রীটি ঘটনার সাথে জড়িত। অপর দিকে, প্রথম তিনজনের মধ্যে পিয়াসও ছিল, যাদের সাথে পারভেজদের ঝগড়া হয়েছিল। তদন্তে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে ঘটনা সম্পর্কে সব বিস্তারিত জানা যাবে। পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির হত্যা মামলা করেছেন বনানী থানায়, যেখানে আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা হলেন- মেহেরাজ ইসলাম, আবুজর গিফারি ওরফে পিয়াস, মো. মাহাথির হাসান, সোবহান নিয়াজ তুষার, হৃদয় মিয়াজী, রিফাত, আলী ও ফাহিম। এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, তুষার ও হৃদয় বনানীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। তারা পিয়াসের সহপাঠী।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম দাবি করেছেন, পারভেজকে হত্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা জড়িত। তিনি অভিযোগ করেছেন, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তুচ্ছ একটি ঘটনায় একজন মেধাবী ছাত্রকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেছেন। এ ঘটনায় ছাত্রদল নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
রাকিবুলের অভিযোগের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ফেসবুক পেজে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছে, ছাত্রদল পারভেজ হত্যায় সোবহান নিয়াজ তুষার ও হৃদয় মিয়াজীকে দায়ী করেছে। তবে তারা বলেছেন, সোবহান ও হৃদয় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন ‘পুসাব’ তাদের ফেসবুক পেজে যে তিনজনের নাম দিয়েছে, সেখানে সোবহান ও হৃদয়ের নাম নেই। সিসিটিভি ফুটেজেও তাদের কোনো উপস্থিতি বা হত্যার সাথে কোনো সম্পর্ক দেখা যায়নি।
পারভেজের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, পারভেজ শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিলেন এবং কখনও মারামারিতে জড়াননি। তিনি এই হত্যার বিচার দাবি করেন। পারভেজ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, হাসাহাসির ঘটনা থেকেই এই হামলা ঘটেছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে এবং তারা জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে এবং আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta