সাক্ষাৎকার - শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কিছু বাধা আসলেও তা সাময়িক। কিছু সময়ের জন্য সমস্যা হতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো একটি উন্নত, স্বনির্ভর এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিকল্পনা এটি। নির্বাচনে জনগণের সমর্থন পেলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব মন্তব্য তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান। বাংলাদেশ প্রতিদিন: বর্তমানে নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলো সংস্কার চেয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছে। জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলোর অবস্থানও পরিষ্কার নয়। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সময়সীমা কবে নাগাদ হতে পারে? আপনি কী মনে করেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আমরা অনেকবার দেখেছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন চলছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করতে নানা বাধা এসেছে, কিন্তু এগুলো অতিক্রম করে গণতন্ত্র এগিয়ে গেছে। এখনো কিছু বাধা আসতে পারে, তবে এগুলো তেমন বড় কিছু নয়। শেষ পর্যন্ত দেশে নির্বাচন হবে। হয়তো ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অথবা ফেব্রুয়ারিতেও হতে পারে। এ কারণে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। গণতন্ত্রের পক্ষে আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বড় দল হিসেবে আমরা কখনও অধৈর্য হইনি এবং ভবিষ্যতেও হব না। আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া, তিনি অসুস্থ হলেও তার দৃঢ় মনোবল রয়েছে। তারেক রহমানও জনগণকে আশ্বস্ত করছেন এবং তাঁদের সাহসী নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাব। ৫ আগস্টের পর থেকে তার বক্তব্য জনগণকে একত্রিত করেছে। তিনি দেশের শাসন ব্যবস্থার উন্নতি করতে ৩১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন। ‘পাওয়ার অব ব্যালেন্স’ সহ সুসাশন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: আপনি সংস্কার কার্যক্রম কিভাবে দেখছেন এবং এটি নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা কি না?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি : আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। তিনি সংস্কারের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের অনেক মিল রয়েছে। আমাদের কোন বিরোধ নেই সংস্কারের প্রতি, বরং বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইনের শাসন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। চলমান এই সংস্কার প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চলমান। হাসিনার বিচার, তার পরিবারের বিচার এবং তাদের দোসরদের বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের মন্ত্রিসভা, প্রশাসন ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন—সবই সমান্তরালভাবে চলতে পারে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিলে জনগণ আশ্বস্ত হবে এবং দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। এটি বিদেশী বিনিয়োগ আনার পথও প্রশস্ত করবে। এটি একটি অন্তর্বর্তী সরকার এবং আমরা তাদের সমর্থন দিয়েছি। তবে, তাদেরও একটি মেয়াদ রয়েছে এবং নির্বাচন সম্পর্কে অস্থিতিশীলতা দূর করা উচিত।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: নির্বাচন প্রসঙ্গে বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে কি না এবং সরকারের টালবাহানা নিয়ে আপনি কী মনে করেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি: দেশীয় ও বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে দিয়েছে। তারা কখনোই দেশের জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়নি। তবে, আমরা চাই বিদেশি শক্তির প্রভাব না থাকুক, আমাদের বন্ধু থাকুক, প্রভু না। এটি একটি নিরপেক্ষ অবস্থান যা দেশের জনগণের এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে, এমনকি মিডিয়া ট্রায়াল করা হচ্ছে। আপনি কীভাবে এর মোকাবিলা করবেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি: আমাদের দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। শহীদ রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের নেতা তিনি। বিএনপি তার গড়া দল এবং আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও জাতীয়তাবাদকে ধারণ করি। বিএনপি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। জামায়াতে ইসলামী তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে সঠিকভাবে তুলে ধরুক। তবে তাদের কর্মকাণ্ড এবং আদর্শ দেশের জনগণ ভালোভাবে জানে। আমরা আশা করি তারা ইতিবাচক রাজনীতি করবে এবং দেশের জন্য কাজ করবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: 'মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন' সরকারের সময়কার 'মাইনাস টু' ষড়যন্ত্র এখন 'মাইনাস বিএনপি' করার প্রচেষ্টা চলছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি: ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ছিল আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের ফসল। তারেক রহমান এবং বিএনপি নেতাদের ওপর নির্যাতন ছিল এক ভয়াবহ চক্রান্তের অংশ। এখন দেশে আলোর আশ্বাস দেখা যাচ্ছে। যারা আবারো ষড়যন্ত্র করতে চায়, তাদের জন্য সতর্ক বার্তা—এ ধরনের চক্রান্ত সফল হবে না।এটি দেশের রাজনীতিতে অন্ধকারের যুগকে শেষ করেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অর্থনীতি নিয়ে আপনার মতামত কী?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি: গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করেছে এবং মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। আমাদের বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছেন। হাজারো মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এটা একটি অমানবিক সময় ছিল। আমাদের উপর যে দুঃশাসন চাপানো হয়েছিল, তার পরিণতি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক নয়। বাংলাদেশের মানুষ এর শেষ দেখতে চায়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপি কতটা প্রস্তুত?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি: আমাদের আন্দোলনই আমাদের প্রস্তুতির মূল। দেড় দশক ধরে আমরা আন্দোলন করেছি। দলীয় নেতৃত্ব প্রার্থী বাছাই করবে, তবে আমরা সবাই একসাথে কাজ করে প্রার্থীকে জয়ী করতে প্রস্তুত। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য প্রস্তুত, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: আগামী নির্বাচনে বিএনপি কি নতুন কোনো জোট করবে?
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি: নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta