যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজারেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বাধ্য হয়েছেন এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১৬০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১,০২৪ জন শিক্ষার্থী— যার মধ্যে হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, মিশিগান এবং ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে— মার্চ মাসের শেষ দিকে এই সমস্যায় পড়েন।
হঠাৎ ভিসা বাতিল হওয়ায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তাদের অভিযোগ, সরকার আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাদের বৈধতা বাতিল করেছে এবং এর কোনো সঠিক কারণও দেখানো হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন বা পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
এসিএলইউ অব মিশিগানের আইনজীবীরা এক মামলায় বলেছেন, এই ভিসা বাতিলের সময়কাল এবং তার মিল দেখে স্পষ্ট যে ডিএইচএস একটি জাতীয় নীতি গ্রহণ করেছে (লিখিত বা না লিখিত) যার মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৈধ মর্যাদা প্রমত্তভাবে বাতিল করা হচ্ছে।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্টমাউথ কলেজের চীনা কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র ঝিয়াওতিয়ান লিউয়ের মামলায় এক বিচারক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া এবং জর্জিয়াতেও একই ধরনের মামলা করা হয়েছে। তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এখনও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে আমেরিকান ইমিগ্রেশন লইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএলএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে সম্প্রতি ৩২৭ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের তথ্য তাদের কাছে এসেছে, যার মধ্যে ৫০ শতাংশই ভারতীয়। ১৪ শতাংশ চীনা এবং বাকিরা বাংলাদেশি, নেপালি ও দক্ষিণ কোরীয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগ (আইস) এই ভিসা বাতিলের কাজ করছে।
তারা গত চার মাস ধরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে, তবে এ বিষয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে, যার কারণে নিরীহ শিক্ষার্থীরা ভুলের শিকার হচ্ছেন। তাদের অপরাধের কোনো তথ্য না থাকার পরও তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তারা 'ধরা এবং বাতিল' নীতি অবলম্বন করছেন, যেখানে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং দেখা হচ্ছে তারা কি ইহুদিবিদ্বেষী কিছু করছেন কিংবা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থন করছেন।
সম্প্রতি ৩৭২ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের খবর পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের ভিসা ছিল এফ-১, যার মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাসের বেশি সময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাদের ভিসা বাতিল হওয়ায় এখন তারা দেশটিতে কাজ করতে পারবেন না। ভিসা বাতিলের জন্য টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, মিশিগান এবং অ্যারিজোনা রাজ্যগুলোও প্রস্তুত।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৩.৩ লাখের বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় ২৩% বেশি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে— ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা ইস্যু ৩০% কমে গেছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta