মে মাসে ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট : ডিএনসিসি প্রশাসক
‘আগামী মে মাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে। ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ৫৪ লাখ টাকা প্রাইজমানি বরাদ্দ থাকবে। এরপর আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করবো। প্রতি বছর ৪টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। নারীদের জন্য আলাদা টুর্নামেন্টও হবে। নারীদের জন্য আমাদের শহরে আরও বেশি পাবলিক স্পেস সৃষ্টি করতে হবে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে যুব উন্নয়ন এবং বিনোদনের পাশাপাশি কালচারাল ফ্যাসিজমের বিপক্ষে লড়াই করা হবে। খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কালচারাল ফ্যাসিজম মোকাবিলা করতে হবে। আমরা একসাথে কাজ করে একটি ন্যায্য ঢাকা গড়তে পারবো।’
শনিবার সকালে রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠে ডিএনসিসি এবং বনানী স্পোর্টস এরেনা আয়োজিত ‘ক্রিকেট কার্নিভাল-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিসি প্রশাসক এসব কথা বলেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই মাঠটি (বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ) আগে শেখ পরিবারের দখলে ছিল। আমরা এটি উদ্ধার করেছি। এখন মাঠের প্রবেশমুখে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ। ঢাকার মতো সারা দেশের অনেক জায়গাই একসময় দখল হয়ে গিয়েছিল। এটি রূপক অর্থে অন্য দেশের দখলে ছিল এবং বাস্তবে তাদের সহযোগীদের দখলে ছিল। শেখ পরিবার গত ১৭ বছরে দেশের প্রকৃতিক সম্পদ ও পাবলিক স্পেস দখল করেছিল। সাধারণ মানুষের কোনো প্রবেশাধিকার ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘোষণা দিয়েছি, ডিএনসিসির মাঠগুলো কোনো ক্লাবের অধীনে থাকবে না। কারণ, ক্লাবের অধীনে থাকা মানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যাওয়া। পাবলিক স্পেসে মানুষের প্রবেশ ও শিশুদের খেলাধুলার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য মাঠ বরাদ্দ দিলে সামাজিক বৈষম্য তৈরি হয়, তাই তা আর হতে দেওয়া হবে না।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠসহ ডিএনসিসির বেশ কয়েকটি মাঠে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য কেয়ার সেবা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের জন্য বিনোদন এবং বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই মডেল অনুসরণ করে অন্যান্য মাঠেও একই ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যারা এই মাঠগুলোর দেখভাল করবে।’
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘দুই মাস হলো আমি দায়িত্ব নিয়েছি। গত দুই মাসে আমরা বেশ কিছু মাঠ উদ্ধার করেছি। গত সপ্তাহে মিরপুর প্যারিস রোড মাঠের অবৈধ মেলা সরিয়ে দিয়েছি। এছাড়া মিরপুর বাউনিয়ায় ১২ বিঘা জমির একটি মাঠ উদ্ধার করেছি। সেখানে বড়দের জন্য একটি অলিম্পিক সাইজের ফুটবল মাঠ এবং শিশুদের জন্য আলাদা খেলার মাঠ থাকবে। বড় মাঠগুলোতে আমরা মায়েদের জন্য ক্লাব গঠন করবো, যাতে তারা শিশুদের খেলার সুবিধা পায়। সিনিয়র সিটিজেনদেরও মাঠের ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা হবে।’
প্রশাসক বলেন, ‘ডিএনসিসির এলাকায় বর্তমানে ২৫টি মাঠ রয়েছে। তবে ড্যাপের নকশা অনুযায়ী, এখানে ৫৫০ একর জমি মাঠ এবং পার্কের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এগুলো এখন দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা রাজউকের সহযোগিতায় এগুলো উদ্ধার করার জন্য কাজ করছি। এই ৫৫০ একর জমির খাজনা খারিজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে ঢাকার পাবলিক স্পেসগুলো উদ্ধার করা হবে।’
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করতে নিজে ব্যাটিং করে ‘ক্রিকেট কার্নিভাল-২০২৫’ এর উদ্বোধন করেন। বিপরীতে বোলিং করেন জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক। এরপর ডিএনসিসি প্রশাসক অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আঁকা ছবিগুলোর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি (বিসিবি) ফারুক আহমেদ, জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক, হাবিবুল বাশার সুমন, জাবেদ ওমর বেলিম ও শাহরিয়ার নাফীস প্রমুখ।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta