আখতার হোসেন: সংবিধান পুনর্লিখন ও গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করেছি
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, কীভাবে নতুনভাবে একটি সংবিধান রচনা করা যেতে পারে এবং গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির বৈঠকের বিরতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পন্থা নিয়ে তারা কথা বলেছেন।
আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে এজেন্ডা ও ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি দেখিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন অপরিহার্য, তবে তার আগে সংস্কার ও বিচারের কাজ দৃশ্যমান করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু অকারণে সময় বাড়ানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সংবিধান নিয়ে আলোচনা করেছি। এখনো বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের মতামত দিতে চেয়েছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধানের কাঠামোতে দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি সম্ভব নয়। বরং প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে একক ক্ষমতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যের পক্ষে এবং সংবিধানের মূল কাঠামোগত সংস্কারের কথা বলছি। সেই প্রেক্ষিতে সংবিধান কীভাবে পুনর্লিখন করা যায় ও গণপরিষদের নির্বাচন বাস্তবায়নযোগ্য কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ সময় দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেখানে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আমরা ১২৯টিতে একমত পোষণ করেছি। যেগুলোর সঙ্গে একমত হয়েছি, সেগুলোর ওপর আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত তিনটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। প্রথমত, নাগরিকদের নিরাপত্তা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র নাগরিকদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। আমরা অতীতে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি। তাই নির্বাচিত সরকার থেকে নির্বাচিত সরকারের মধ্যে কীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, তা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা চলছে। তৃতীয়ত, সংসদে স্থিতিশীলতার নামে ধারা ১৭-এর মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে যাতে সংসদ আরও কার্যকর, স্বাধীন এবং গণমুখী হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় এলডি হলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফররাজ হোসেন ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এনসিপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসেল।
আরএস
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta