৪৫০ বছরের পুরনো নড়াইলের গোয়ালবাথান মসজিদ
নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাথান জামে মসজিদটি প্রায় ৪৫০ বছর পুরোনো। মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মসজিদটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। ধারণা করা হয়, নড়াইলে এটি সবচেয়ে পুরনো মসজিদ। মসজিদটির পাশেই একটি বড় পুকুর রয়েছে, যার শান্ত জলরাশি মসজিদের সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলিয়ে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। প্রতিদিন এখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন।
ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি নড়াইল জেলা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের চালিতাতলা বাজারের কাছেই অবস্থিত। বাজার পার হওয়ার পর এক কিলোমিটার সোজা রাস্তা চললে ডানদিকে গোয়ালবাথান গ্রাম। এই মসজিদটি গ্রামটির বাম পাশে একটি ছোট, নীল রঙের মসজিদ, যা গোয়ালবাথান জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিত। চারিদিকে বনজঙ্গলে ঘেরা এই মসজিদটি জেলা সদর থেকে সবচেয়ে পুরনো।
মসজিদটি ৫ একর ৭০ শতক জায়গার ওপর নির্মিত। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৫ ফুট। ছোট ছোট ইট ও চুন সুরকির ব্যবহারে গম্বুজসহ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। এর উপরে রয়েছে চারটি ছোট মিনার এবং বজ্রপাত প্রতিরোধী লোহার দণ্ড। মসজিদটি কোনো পিলার ছাড়াই স্থাপিত, এবং রড ছাড়া এর গম্বুজের নির্মাণশৈলী অত্যন্ত সুন্দর। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, মসজিদটি জ্বীনদের দ্বারা নির্মিত হয়েছে, এবং সেই সময় জ্বীনরা এখানে নামাজ পড়তেন।
স্থানীয়দের মতে, প্রায় ৪০০ বছর আগে মোগল শাসনামলে মুন্সী হবৎউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি এই গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তিনি এক রাতে মসজিদ এবং সংলগ্ন একটি পুকুর খনন করেন। এর পর থেকেই গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন নিয়মিত এখানে নামাজ পড়তে আসতে থাকেন।
গ্রামটির পুরানো ইতিহাস অনুযায়ী, এই এলাকাটি আগে বাগানজঙ্গল ছিল, এবং মুন্সী হবৎউল্লাহই প্রথম বাসিন্দা ছিলেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি মসজিদ তৈরি করবেন এবং এরপর সে অনুসারে মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস ছিল, কিন্তু মুন্সী হবৎউল্লাহ মসজিদ নির্মাণের পর মুসলিমদের জন্য জায়গা তৈরি করেন। মসজিদটির পাশেই একটি বড় পুকুর খনন করা হয়, যার মাধ্যমে এলাকার মুসল্লিদের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়।
এলাকাবাসীর মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস হলো, মসজিদটি এবং পুকুর এক রাতেই নির্মিত হয়েছে এবং এটি জ্বীনদের দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটির বিষয়ে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে যে, মুসল্লিরা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে নামাজ পড়তে আসতেন এবং সেখানে তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।
মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি মাওলানা তাইয়েবুর রহমান বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমরা জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মসজিদটি সংস্কার করছি। মসজিদে ভালো বাথরুম বা পানির ব্যবস্থা নেই। আমরা আশা করি, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি সংরক্ষণ করবে।’
যশোরের রাজিব আহসান বলেন, ‘আমি গোয়ালবাথান মসজিদে এসে নামাজ আদায় করেছি। ৪০০ বছরের পুরনো এই মসজিদটি দেখলে খুব ভালো লাগে। আমি আশা করি, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে।’
মসজিদের ইমাম মুন্সি রহমতউল্লাহ বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘এটি আমার পূর্বপুরুষদের তৈরি করা মসজিদ। এখানে একসময় শুক্রবারে বিশাল জমায়েত হতো। মুসল্লিরা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে নামাজ পড়তে আসতেন এবং আমাদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো।’
শাকিল/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta