পাঁচ শত বছরের কালীমন্দির
৫০০ বছরের পুরনো উলপুর কালীবাড়ির নতুন মন্দিরে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন দ্যুতি। আধুনিক নকশায় নির্মিত এ মন্দির দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে সাজানো। এখানে স্থাপিত রয়েছে শতবর্ষ পুরনো মাটির তৈরি একটি কালীমূর্তি, যা দেখতে প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী ও ভক্ত আসছেন দূরদূরান্ত থেকে। এই কালীবাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে উলপুর ইউনিয়নের উলপুর গ্রামে অবস্থিত। ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আদেশে জমিদার দশরথ বসু রায় চৌধুরীর বংশধর রঘুনন্দন বসু রায় চৌধুরী এখানে জমিদারি গড়ে তোলেন এবং কালী সাধকের পরামর্শে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২২ সালে একতলার পুরাতন স্থাপনার স্থানে নির্মিত হয় কারুকার্যপূর্ণ এই মন্দির। জমিদার সুধন্য কুমার রায় চৌধুরীর তৃতীয় পুত্র ও জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি মৃণাল কান্তি রায় চৌধুরী পপা প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে স্থাপিত হয়েছে শতবর্ষী কালীমূর্তি, পাশাপাশি শিব ও বাসন্তী দেবীর মন্দিরও রয়েছে। শানবাঁধানো পুকুরঘাট ও কারুকাজ খচিত মিনারসহ পুরো স্থাপনা দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। মিনারের ফাঁকা অংশ কাচে আবৃত, যার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে মন্দির আলোকিত করে। মন্দিরের দেয়ালে দেবদেবীর মূর্তি এবং বর্ণিল কলকার সাজসজ্জা মন্দিরকে আরও নয়নাভিরাম করে তুলেছে।
মন্দিরের প্রধান পূজারি সন্তোষ ভট্টাচার্য জানান, জমিদারদের পক্ষ থেকে তাদের পূজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকেই বংশ পরম্পরায় তারা পূজা চালিয়ে যাচ্ছেন। পূর্বপুরুষদের বর্ণনায় জানা যায়, সাহাপুর পরগনায় জমিদার রঘুনন্দন বসু রায় চৌধুরী প্রথম জমিদারি পান। জমিদারের লোকজন জলাবদ্ধ ও নলখাগড়া ঘেরা গ্রামে এক উঁচু ভিটায় এক কালী সাধককে তপস্যায় দেখতে পান এবং জমিদারকে খবর দেন। পরে জমিদার এসে সাধকের কাছে জমিদারির কল্যাণের উপায় জানতে চাইলে, সাধক জানান, মা কালী নির্দেশ দিয়েছেন এখানে তপস্যা করতে এবং এখন তার তপস্যা শেষ। তিনি বলেন, এখানে একটি কালীমন্দির স্থাপন করে নিয়মিত পূজার আয়োজন করলে কল্যাণ হবে। সাধকের পরামর্শ অনুযায়ী শক্তি মন্ত্রে দীক্ষিত ভাস্কর দিয়ে একতলা মন্দির তৈরি করে পূজা শুরু হয়। বর্তমানে এখানে যে কালীমূর্তি আছে তার বয়স প্রায় ৯৫ বছর। এটি মাটির তৈরি হলেও দেখতে পাথরের মতো মনে হয়। শক্তি মন্ত্রে দীক্ষিত ভাস্কর এখন আর না থাকায় নতুন মূর্তি তৈরি করা সম্ভব হয়নি। আগের চারটি মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
পূজারি আরও বলেন, প্রতিবছর কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় এই মন্দিরে বাৎসরিক কালীপূজা হয়। বসন্তকালে বাসন্তীপূজা এবং শিব চতুর্দশীতে শিবপূজাও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta