কর্মীদের উৎসাহিত রাখতে বিদেশে বসেই ঈদ বকশিশ সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের
জুলাই আন্দোলনের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপি নেতারা ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তারা বিদেশে বসে আরামে ঈদ উদযাপন করেছেন।
জুলাই আন্দোলনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপি নেতারা ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। বিদেশে বসে তারা ঈদ উদযাপন করেছেন।
ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে দেশের অভ্যন্তরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারা ভারতে বসে অস্ত্র ও অর্থের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখতে ঈদ বকশিশের নামে টাকা পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, এই নেতারা দেশের পাচার হওয়া টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন। তাদের যেসব দেশে আশ্রয়, সেখানে বসে তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। শীর্ষ নেতাদের বিদেশে বিলাসবহুল ঈদ উদযাপনের ছবি দেখে জনসাধারণ মনে করছেন, তাদের প্রতি উপহাস করা হয়েছে। এর ফলে জনমনে ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ঈদ উদযাপনের হাস্যোজ্জ্বল ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা দেশে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে ছদ্মবেশে আছেন।
একটি সূত্র জানায়, ভারতে বসে বাংলাদেশে আত্মগোপন করা কর্মীদের ঈদের বকশিশের নামে টাকা পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। মূলত হুন্ডির মাধ্যমে তারা এসব টাকা নির্বাচনি এলাকায় পাঠিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ যখন আর্থিক সংকট, বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মুখোমুখি, তখন এসব নেতাদের বিলাসী জীবনযাত্রা তাদের শাসনামলের দুর্নীতির পরিচায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে সাবেক চার মন্ত্রীকে একত্রে দেখা গেছে। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে দেখতে মঙ্গলবার সাবেক চার মন্ত্রী হাসপাতালে যান। এছাড়া যুক্তরাজ্যের একটি রেস্টুরেন্টে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। তারা অনুষ্ঠানে হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলেছেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, দেশ সংকটে থাকাকালীন কীভাবে এসব নেতারা বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ টাকা দিয়ে তারা বিদেশে বাড়ি, রেস্টুরেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলেছেন। অনেকেই কানাডার ‘বেগমপাড়ায়’ পরিবারের সঙ্গে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে বিদেশি শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সাধারণ মানুষ বলছেন, দেশের সম্পদ লুট করে এরা বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে, অথচ দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছে। এটি চরম অন্যায়।
একজন নেতা বলেন, “আমাদের নেতারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে আয়েশ করছে। আমরা কষ্টে থাকব আর তারা বিলাসী জীবনযাপন করবে-এটা মেনে নেওয়া কঠিন।”
দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব দুর্নীতিবাজ নেতাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাদের পাচার করা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা এবং দেশের অর্থনীতিতে পুনঃবিনিয়োগ করা প্রয়োজন। তারা বলেন, “যারা দেশের টাকা লুটপাট করে পালিয়ে গেছেন, তাদের ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক আইনের সাহায্য নেওয়া উচিত।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের অর্থ পাচারের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই সবার পক্ষ থেকে অবিলম্বে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠেছে।
ভারতে বসে ঈদ বকশিশ : প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে এবার ভিন্নভাবে ঈদ উদযাপন করেছেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে সরকার পতন হলে শেখ হাসিনার সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের একটি অংশ কারাগারে রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ভারতে ও অন্যান্য দেশে নির্বিঘ্নে পালিয়ে রয়েছেন। বাকিরা আত্মগোপনে আছেন। গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পলাতক নেতারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের নির্বাচনি এলাকার কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। বিশেষ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া নেতারা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে দেশের ভেতরে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তারা ভারতে বসে অস্ত্র ও অর্থের ব্যবস্থা করেছেন। তারা ঈদ বকশিশের নামে কর্মীদের টাকা পাঠিয়েছেন।
৩১ মার্চ দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৯ দিনের ছুটি পেয়েছেন। ঈদের সময় রাজধানী প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এই সুযোগে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের পরিকল্পনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি নেয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সতর্কতার কারণে নাশকতার পরিকল্পনা প্রতিরোধ করা গেলেও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো ঠেকানো যায়নি।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta