শার্লক হোমস এবং বাংলাদেশ
বাংলা সাহিত্যে রহস্য গল্পের মধ্যে ড. কাজী মোতাহের হোসেনের পুত্র কাজী আনোয়ার হোসেনের ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ, বগুড়ার লেখিকা রোমেনা আফাজের ‘দস্যু বনহুর’ এবং সাংবাদিক আসফ-উদ্-দৌলা রেজার ‘দস্যু স্বপনকুমার’ উল্লেখযোগ্য। এভাবে প্রত্যেক ভাষায় রহস্য উপন্যাসের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণের ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ও উল্লেখযোগ্য। ইংরেজি সাহিত্যে আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস এবং ডা: আর্থার কোনান ডয়েলের সৃষ্টি শার্লক হোমস রহস্য উপন্যাসের অন্যতম অমর চরিত্র। শার্লক হোমস ইংরেজি সাহিত্যের একটি অনন্য সৃষ্টি, এক অমর গোয়েন্দা চরিত্র।
লেখক ছিলেন একজন চিকিৎসক, যিনি ডা: ওয়াটসনের মাধ্যমে গোটা কাহিনী তুলে ধরেছেন। শার্লক হোমস কেবল গোয়েন্দা চরিত্রই নন, তিনি নির্বাচনী প্রহসন সম্পর্কেও লিখেছেন। শার্লক হোমসের বেশ কিছু কাহিনী আছে, যার মধ্যে নির্বাচনী প্রহসন সংক্রান্ত লেখাটি উল্লেখযোগ্য।
এই কাহিনীতে শার্লক হোমস যুক্তরাজ্য থেকে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এক অদ্ভুত নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখে, যা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মিল রয়েছে। প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমের আদর্শ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা কীভাবে অধোগত হয়েছে, তা ডা: আর্থার কোনান ডয়েলের লেখায় উঠে এসেছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলায় অনুবাদ হয়ে ‘শার্লক হোমসের বিচিত্র কাহিনী’ বইটি প্রকাশিত হয়, যেখানে নির্বাচনের পেছনের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। আমেরিকার গণতন্ত্রের নামে পেশিতন্ত্রের প্রচলন এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের নিশিরাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের প্রহসন নির্বাচনসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেনি, এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়া ছিল একদম প্রহসনের মতো।
আমেরিকায় যেভাবে বেআইনি অস্ত্র, অর্থ ও পেশিতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি হতো, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের অধোগতি ঘটেছে। শার্লক হোমসের কাহিনীতেও এ ধরনের নির্বাচনী প্রহসন লক্ষ করা গেছে, যেখানে পেশিতন্ত্রের জয়জয়কার।
বাংলাদেশে চব্বিশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তি তাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু এর জন্য মূল্য দিতে হয়েছিল। হাজার হাজার প্রাণহানি হয়েছে, এবং জাতিসঙ্ঘও এই ঘটনায় শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী অপশক্তির দায় স্বীকার করেছে। বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আমেরিকাতে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ছিল, কিন্তু বাংলাদেশে তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে বর্তমানে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মধ্যে কমিশন যথাসম্ভব নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে। আশা করা যায়, এই বছরের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta