পাঁচ ফেব্রুয়ারি: বিপ্লবের ইতিহাস
৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একটি মারাত্মক ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৈতৃক বাড়ি ‘ধানমন্ডি-৩২’ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। এই ঘটনায় দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই ঘটনার বিশ্লেষণ করা জরুরি মনে হয়েছে। কেন এমন ঘটনা ঘটল এবং এর পরিণতি কী হতে পারে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
প্রথমত, হাসিনার মন্তব্যের কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে এমন একটি ঘটনা ঘটেনি। ৫ ফেব্রুয়ারি হাসিনার ছাত্রলীগের ওয়েব পেইজে বক্তৃতা দেওয়ার ঘোষণার পর ফ্যাসিবাদবিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়ে যায়। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ এবং সাধারণ জনগণের অসন্তোষের ফলে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা এর বিরোধিতা করতে শুরু করে। ছাত্রলীগের অতীতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নির্যাতন, চাঁদাবাজি এবং হত্যার বিষয়গুলো একে অন্যদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তোলে।
বিগত ছয় মাসে দেশের জনগণ এমন সব হৃদয়বিদারক ভিডিও দেখছে যা জনগণের ক্ষোভকে আরও উস্কে দিয়েছে। এসব দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হাসিনা এবং তার দলের সদস্যদের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। বহু অর্থ পাচারের বিষয়, বিলাসবহুল প্রকল্পে দুর্নীতি, বিদেশে সম্পদ অর্জনের ঘটনা জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এর মধ্যে হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।
ভারতের সঙ্গে নানা চুক্তির অসামঞ্জস্যতা, বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতি অনীহা এবং হাসিনার ভারতের প্রতি একতরফা সমর্থন জনগণের ক্ষোভকে আরও গভীর করেছে। ফলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এসব ব্যাপারে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ভারতের সঙ্গে হাসিনার সম্পর্ক এবং তার অন্ধ সমর্থন নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরোধিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট বার্তা গেছে।
এই ঘটনা দেশের জনগণের মধ্যে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে। জনগণ যে কোনো ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে সক্ষম, এটা এখন স্পষ্ট। তাই ভবিষ্যতে যারা রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসবেন, তাদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা।
এই ঘটনা নাগরিক সমাজকে আশ্বস্ত করে না, কিন্তু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সরকারসহ সব পক্ষকে দেশের স্বার্থে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
e-mail : [email protected]
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta