শেখ হাসিনার গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ক্ষমতা বজায় রাখতে শেখ হাসিনা নৃশংস গণহত্যার কোনো পদ্ধতি ছাড়েননি। জাতিসঙ্ঘের তদন্তে এসবের কিছু তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতা উপেক্ষা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন এবং তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিক্ষোভ দমনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গ্রেফতার ও নির্যাতন চালানো হয়। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্কের বক্তব্য জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ছাত্র আন্দোলনকালে বাংলাদেশ সরকারের সহিংসতা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে এক হাজার ৪০০ মানুষ হত্যার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়েছে। বিবিসি এবং আলজাজিরা রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তার সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পরিকল্পিত সহিংসতা ব্যবহার করেছেন।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার সরকার নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় চরম সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেফতার ও নির্যাতন চালিয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
এছাড়া, ২১ জুলাই এবং আগস্টে গোয়েন্দা রিপোর্টে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়ে শেখ হাসিনাকে সতর্ক করা হয়েছিল। ২৯ জুলাই মন্ত্রিসভা বৈঠকে আন্দোলনের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়, এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের থেকে সরাসরি নির্দেশনা দেওয়া হত।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জড়িত থাকার কারণে শীর্ষ নেতাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করা হতো এবং গুলি চালানোর বিষয়ে কোনো অশুভ লক্ষ্য ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল এবং বহু নিরীহ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং ৩৬ জন সাক্ষীর সাথে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' বাংলাদেশ সরকারের উন্নতি প্রশংসা করলেও জানিয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার ছাড়া একতা ও অগ্রগতি অর্জন কঠিন।
জাতিসঙ্ঘের তদন্ত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য আরও একবার শেখ হাসিনার গণহত্যাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত করেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
[email protected]
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta