শনিবার, ১৫রা মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে জরুরি উন্নয়নের আহ্বান

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জরুরি উন্নয়নের আহ্বান
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে জরুরি উন্নয়নের আহ্বান

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহে ‘অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন ২০২৪’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

২০২৪ সালে অর্জিত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির বিষয়ে এই প্রতিবেদনটি দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের (এএ) সম্ভাব্যতা তুলে ধরে। এতে বাংলাদেশে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের বাড়তি হুমকি এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সুরক্ষায় অর্থায়ন ও কভারেজ ঘাটতি মোকাবিলার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ডব্লিউএফপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, দুর্যোগের প্রভাব হ্রাসে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে কাজ করেছে।

এই প্রতিবেদন সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান জানান, এটি অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের মূল শিক্ষা, প্রভাব ও প্রসারের সুযোগ প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছি, যা এই পদ্ধতির গুরুত্ব প্রমাণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আসার আগে নগদ সহায়তা প্রদান করে উপকূলীয় জনগণের ক্ষতি কমানো, জীবিকা রক্ষা এবং জরুরি সম্পদ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। তদুপরি, জুলাই মাসের বন্যা ও স্থানীয় দুর্যোগের সময়ে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের সাহায্যে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি আটকানো গেছে।’

তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলা, আগাম সতর্কতামূলক টুল উন্নয়ন এবং কমিউনিটি লেভেলে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

যদিও অর্জন রয়েছে, প্রতিবেদনে কিছু গুরুতর ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। ২০২৫ সালের জন্য প্রয়োজনীয় ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে এখনও অর্ধেকের বেশি অর্থ পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বর্ষা মৌসুমের বন্যা (২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), ঘূর্ণিঝড় (১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং আকস্মিক বন্যা (৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) মোকাবিলায়।

এছাড়া, ২০২৪ সালে প্রয়োজনীয়তার মুখে ৫৪ শতাংশের বেশি পরিবার সহায়তা পায়নি, বিশেষত আকস্মিক বন্যার জন্য ৮৮.২ শতাংশ কভারেজ ঘাটতি ছিল। কভারেজ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা এখনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনটিতে ২০২৫ সালে বাড়তে থাকা ঝুঁকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশনের অব্যাহত প্রয়োজনীয়তা প্রকাশিত হয়েছে। এতে ২৩টি জেলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে শৈত্যপ্রবাহ, ভূমিধস, খরা ও ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ৪.১ মিলিয়নের বেশি পরিবার বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারে, যার মধ্যে ২.৭ মিলিয়ন পরিবার প্রভাবিত হতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রতিবেদনটি ঝুঁকি পুলিং, অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন বীমা এবং বহু-বছরের অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছে, যা স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের হেড অফ প্রোগ্রামস রিকার্ডো সাপ্পো জানান, প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন প্রতিষ্ঠা এবং কার্যকরী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি তুলে ধরেছে, যদিও অর্থায়ন এবং কভারেজের ঘাটতি এখনও রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ সমাধানে উন্নত সমন্বয় এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এএ প্রচেষ্টায় সহায়তা প্রদানকারী দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইউএন সার্ফ, কইকা, এবং অন্যান্যদের ধন্যবাদ জানাই।’

ডব্লিউএফপি বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংস্থা যা জরুরি পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষা করে এবং সংঘাত, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারে খাদ্য সহায়তা প্রদান করে মানুষের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি সৃষ্টির কাজ করে।

সূত্র : বাসস।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta

আজকের সর্বশেষ