বিনিয়োগকারীরা আর ভরসা পাচ্ছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্যে একটি নতুন দিশা দেখালেও বিনিয়োগকারীরা তাতে আশ্বস্ত হচ্ছেন না। সম্প্রতি ট্রাম্প তার কঠোর শুল্কনীতি কিছুটা শিথিল করলেও চীনের ক্ষেত্রে তা আরও কঠিন করেছেন, যা আবারও বৈশ্বিক অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
চীন চলতি বছরে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০টি সিনেমা আমদানি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ভিডিও গেমভিত্তিক সিনেমা ‘এ মাইনক্রাফট মুভি’। তবে যখন ট্রাম্প অধিকাংশ দেশের জন্য ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনলেন এবং চীনের জন্য তা বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করলেন, তখন চীনের চলচ্চিত্র প্রশাসন পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ঘোষণা দেয়, হলিউড সিনেমার প্রদর্শনী কমিয়ে আনা হবে। প্রশাসন মনে করছে, এই শুল্ক চীনা দর্শকদের মধ্যে মার্কিন সিনেমার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব হ্রাস করবে।
১১ এপ্রিল চীনের মন্ত্রিসভা ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর কেউ চীনে কিছু বিক্রি করতে পারবে না- ফলে আরও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। চীন সরকার স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিলে তারা তা উপেক্ষা করবে। বিনিয়োগকারীরাও এমনই মনোভাব দেখাচ্ছেন।
৯ এপ্রিল ট্রাম্প ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। শেয়ারবাজারে উন্নতি দেখা যায় এবং সরকারি বন্ডের সুদের হার স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সুখস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্টক সূচক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নিচে নামে, ডলার আবারও দুর্বল হয় এবং বন্ডের দাম কমে সুদের হার বেড়ে যায়। বিশেষ করে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে সুদের হার এক সপ্তাহে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছায়, যা অর্থনৈতিক ধীরগতির পূর্বাভাস সত্ত্বেও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
জেপি মরগান চেজের অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করেছেন, চীনা আমদানি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, আত্মবিশ্বাসে টান পড়েছে এবং নীতিগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র মন্দা এড়াতে পারবে কিনা, সেটি এখন বড় প্রশ্ন।
সাধারণত এমন মন্দার আশঙ্কা সুদের হার কমিয়ে দেয় এবং বন্ডের দাম বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু এবার সেই হিসাব মিলছে না।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লম্বার্ডের ফ্রেয়া বিমিশ বলেছেন, যদি আপনি মার্কিন ট্রেজারির নিরাপদ আশ্রয়ে থাকেন, তাহলে এখন অন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, কিছু হেজ ফান্ড বন্ড বিক্রি করে তহবিল জমাচ্ছে। আবার অনেকে দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ঋণপত্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে ‘টার্ম প্রিমিয়াম’ বাড়াচ্ছেন। এর ফলে ডলারের মান কমছে এবং বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকছেন, যার মূল্য বর্তমানে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে এই পরিস্থিতি কতদিন থাকবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta