বিনিয়োগ সম্মেলন সম্পর্কে আশিক চৌধুরীর পোস্ট, প্রকাশ করলেন পেছনের কাহিনি
সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন, যা আয়োজিত ছিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) দ্বারা। সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান, চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন তার একটি উপস্থাপনা দেন, যা বেশ প্রশংসিত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। তবে আশিক চৌধুরী এই আয়োজনকে 'দশে দশ' বলতে রাজি নন।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানালেন, সম্মেলন আয়োজনে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
এই সম্মেলন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩,১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘোষণা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে চার দিনের পুরো অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন আশিক চৌধুরী। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি এক দীর্ঘ পোস্ট করেন।
পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
চার দিনের ইনভেস্টমেন্ট সামিট শেষ হলো। সব ক্ষেত্রেই দশে দশ পাওয়া যায়নি। যারা হতাশ হয়েছেন, তাদের জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা তিন মাস ধরে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের সম্মেলন আয়োজনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবে এই আয়োজন একা সরকারের নয়, এতে মিডিয়া, প্রাইভেট সেক্টর, এমব্যাসি, ফরেন পার্টনার, পলিটিক্যাল পার্টি এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
যতটুকু ভালো হয়েছে, তা সবটাই সবার কৃতিত্ব। ব্যর্থতাগুলো আমাদের। ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
যে সাড়া পেয়েছি, তাতে আমরা আশাবাদী। প্রতিবছর এমন কিছু আয়োজন করা উচিত। এখানে একটা কথা উল্লেখ করতে চাই, অনেকেই সামিটের রাজনৈতিক অনুমোদন ও ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দেখুন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আগামীতে যাদের সংসদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের সবারই সাধারণ লক্ষ্য। আমি আগেই বলেছি, বড় দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কীভাবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের স্পষ্ট সমর্থন ও সামিটে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
সামিট সফল হয়েছে কি না বা তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে কি না? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে সময় এবং বাজার। তবে আমরা সাফল্য মাপার দুটি উপায় খুঁজে পেয়েছি। স্ট্যাটিসটিক্যাল বা সংখ্যাগতভাবে :
মোট অংশগ্রহণ: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৭১০ জন উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৪১৫ জন ছিলেন বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি। বাকিরা দেশীয় ব্যবসায়ী বা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ব্রেকআউট সেশনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়াও অনেকেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এসে ইনভেস্টরদের সাথে করিডরে দেখা করেছেন।
মোট প্যানেলিস্ট: ১৩০ জন
অফিশিয়ালি দ্বিপক্ষীয় মিটিং: ১৫০টি। বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ অনেকেই দিনভর ভেন্যুতে ছিলেন।
এমওইউ সাইন: ৬টি, কিছু ইমিডিয়েট (যেমন আইএলও), কিছু লং টার্ম (যেমন আর্টেমিস)।
ইনভেস্টমেন্ট ঘোষণা: হান্ডা গ্রুপ ও শপ আপ মিলিয়ে ৩১০০ কোটি টাকার।
বাংলাদেশ সরকারের সম্মেলনে খরচ: ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পার্টনার সংস্থা থেকে অনুদান পেয়েছি আরো ৩.৫ কোটি টাকা।
এছাড়া আমি দুটি কোয়ালিটেটিভ পয়েন্ট শেয়ার করতে চাই :
১. বিদেশিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা: আমরা আগেই বলেছি, বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ একদিনে আসবে না। সামিটে এসে কেউ হুট করে ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে দেবে না। তবে যদি বাংলাদেশ প্রথম দিকেই নেতিবাচক ধারণার শিকার হয়, তাহলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই আমরা হারলাম। বিদেশে বসে গুগলে আমাদের সম্পর্কে যে ধারণা তৈরি হয়, তা রিয়েলিটির থেকে অনেক বেশি নেতিবাচক।
২. দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস: বারাক ওবামার একটি বই আছে 'দ্য অডাসিটি অফ হোপ'। আমাদের দেশের মানুষকে একটু সুযোগ দিলে, উৎসাহ দিলেই তারা দেশ গড়তে এগিয়ে আসবে। আমরা এই সামিটের মাধ্যমে এমন একটি পজিটিভ মোমেন্টাম তৈরির চেষ্টা করেছি।
এই সামিটের সময়কে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছিলঃ ৭-৮ তারিখে বিনিয়োগকারীদের ইপিজেড ও ইকোনমিক জোন ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। স্টার্টআপদের জন্য আলাদা সেশন ছিল। ৯ তারিখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শেয়ার করা হয়েছে এবং সন্ধ্যায় পুরোনো সংস্কৃতির পরিচয় করানো হয়েছে। ৯-১০ তারিখের বাকি সময়টা ছিল নেটওয়ার্কিং এর জন্য।
শেষে, সামিট উপলক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশের থিমেটিক ম্যাপ ডিজাইন করেছি, যা শিল্পায়ন এবং জাতীয় সত্ত্বাকে তুলে ধরে। সকলের জন্য শেয়ার করা হয়েছে। ভাল রেজোলিউশন ফাইলের লিংক কমেন্টে রয়েছে। বিডার কপিরাইট। মানে এটি সবার কপিরাইট, যেখানে খুশি ব্যবহার করুন।
পুনশ্চ ১: সামিট সম্পর্কিত তথ্য ভেরিফায়েড সোর্স থেকে নেবেন। ভুল তথ্যের শিকার হবেন না। আমাদের জিজ্ঞেস করুন, আমরা উত্তর দেব।
পুনশ্চ ২: আমাদের পার্টনারদের ছাড়া এই সামিট সম্ভব হতো না: CA press wing, Ministry of Cultural Affairs, World Bank, UNDP, European Union, Dutch Embassy, FICCI, BGMEA, Citi, HSBC, Lightcastle Partners, Inspira, Sajida Foundation, EBL, IMS and High Voltage.
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta