ঢাকা পরিণত হয় ফিলিস্তিনের একটি অংশ
শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিল প্রতিবাদী মিছিল, সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল
মিছিলকারীদের জন্য বিভিন্ন মোড়ে ছিল বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা
আমরা ভয়হীনভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে এখানে জমায়েত হয়েছি —মাহমুদুর রহমান
বাংলাদেশের জনগণ সব সময় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আছে —শায়খ আহমাদুল্লাহ
আমাদের প্রতিটি হৃদয়ে একটি করে ফিলিস্তিন রয়েছে —আজহারী
রাজধানী ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির আয়োজন করে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নানা শ্রেণির মানুষ প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নিতে ঢাকা আসে।
সকালে রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা এবং নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল। দুপুরের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হন হাজারো মানুষ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকাও লোকারণ্য হয়ে পড়ে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রতিবাদী মানুষ রমনা পার্কে অবস্থান নেন।
ফিলিস্তিনিদের হত্যাযজ্ঞ এবং সার্বভৌমত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচিত ব্যক্তিরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। ঢাকা শহর একেবারে ফিলিস্তিনের দৃশ্যে পরিণত হয়। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেন।
বিকালে বিভিন্ন এলাকা যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, বুয়েট এলাকা, চানখারপুল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকারম, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব, কাঁটাবন মোড়, ইত্যাদি এলাকা প্রতিবাদে ঢেকে যায়। এইসব এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিকাল ৩টার পরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। তেলাওয়াত করেন ইসলামিক স্কলার আহমদ বিন ইউসুফ। এরপর ফিলিস্তিন ও গাজা সম্পর্কিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। মঞ্চে ছিলেন বায়তুল মোকারমের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল মালেক, যিনি গণজমায়েতের সভাপতিত্ব করেন। স্লোগান ও বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে উৎসাহিত করেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ এবং ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অনেকেই। কর্মসূচি শেষ হয় বিকালে মোনাজাতের মাধ্যমে।
বিকাল ৪টা নাগাদ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়, যা পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। কয়েক লাখ লোক এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক, ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির ফয়জুল করীম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
মার্চ ফর গাজার ঘোষণাপত্রে যা উল্লেখ করা হয়েছে
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে জায়নবাদী ইসরাইলের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানানো হয়। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি জনগণের পক্ষ থেকে এ ধরনের দাবি তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ, যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, আজ ফিলিস্তিনের গাজার জনগণের পাশে দাঁড়াতে জমায়েত হয়েছি। এই সমাবেশ আমাদের ঐক্যবদ্ধ শপথ এবং আমরা এখানে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরছি।’
প্রথম দাবিটি হলো, আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরাইলের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা, দ্বিতীয়টি হলো যুদ্ধবিরতি নয়, বরং গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, তৃতীয়টি হলো ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা, এবং চতুর্থটি হলো পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।
মুসলিম উম্মাহর প্রতি আবেদন
ঘোষণাপত্রে মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি একটি আবেদন জানানো হয়। এটি বলা হয়, ফিলিস্তিনের এই সংকটে মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, রাষ্ট্র এবং নেতৃত্বের ওপর দায়িত্ব রয়েছে এবং ইসরাইলকে অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কিছু দাবি উল্লেখ করা হয়, যার মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং গাজার জন্য সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা করা রয়েছে।
মুসলিম হিসেবে আমাদের অঙ্গীকার
ঘোষণাপত্রের শেষে মুসলমান হিসেবে আমাদের এক অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়, যেখানে বলা হয়, আমরা ইসরাইলের দখলদারিত্বকে কখনোই সমর্থন করব না এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করব, যেন তারা বিশ্বাস, আদর্শ এবং ভূখণ্ড রক্ষা করতে সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকে।
গাজার জনগণকে অভিনন্দন
গাজার জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানির মহাকাব্য রচনা করেছেন।”
বাংলাদেশের সব মানুষ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে রয়েছে —এটি মন্তব্য করেছেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহ।
আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে একটি করে ফিলিস্তিন
আজহারী বলেছেন, "এ গণসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে একটি করে ফিলিস্তিন বাস করে।" তিনি আরও বলেন, "এ march শুধুমাত্র পদযাত্রা নয়, এটি আমাদের মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক।"
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta