বাণিজ্যযুদ্ধে বেসরকারি খাতকে সহযোগী করতে হবে।
বিশ্ব প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে। এই পরিস্থিতি কি বিশ্বকে আবার একটি নতুন বাণিজ্যযুদ্ধে নিয়ে যাবে? আর এই দ্বন্দ্ব কি আবার একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেবে? এই প্রশ্নগুলো এখন পৃথিবীজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। আর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি হবে? এই সংকট কি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে? গত বুধবার, চীনকে লক্ষ্য করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, এবং এর পাল্টা হিসেবে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তবে বাংলাদেশসহ ৭৫টির বেশি দেশকে কিছুটা সময়ের জন্য শুল্কের ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন, এই সাময়িক সঙ্কট সমাধান কি বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারবে? চীন যদি আর্থিক চাপের মধ্যে পড়ে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে, এবং একইভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত তার সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ২০২০ সালের পর থেকে বাতিল করেছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন চাপ সৃষ্টি করবে। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভুটান এবং নেপালসহ কিছু নির্দিষ্ট রপ্তানির ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে না, তবে ভারতের নৌপথ এবং বিমানপথ ব্যবহার করতে না পারা বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। এই সময়ে যখন বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনা রয়েছে, ভারতীয় সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করবে।
৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। একমাত্র রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভরসা। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি নির্ভরশীল নয়, কারণ প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে অর্থ পাঠিয়ে থাকে, যা এই সময়টা বাদে কমে যায়। বাংলাদেশের পোশাক খাতও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পর। ৫ আগস্টের পর অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং মালিকরা পালিয়ে গেছেন।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে আগের সরকারের আমলে খেলাপি ঋণ এবং অর্থ পাচারের কারণে সংকট ছিল। সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে, তবে এসব উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদী ফল দেবে। এই মুহূর্তে আইএমএফ বাংলাদেশের আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে, এবং তারা কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, সংকট সমাধানে আরেকটি বড় প্রশ্ন হল সরকার বেসরকারি খাতের আস্থা অর্জন করতে পারবে কি না।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন শুল্ক আরোপের পর জরুরি বৈঠক করেছেন। ৭৫টি দেশে শুল্কের মেয়াদ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হওয়ার পর, প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের সঙ্গে আস্থা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য পরিকল্পনা করা উচিত। সরকারের উচিত ছিল, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর পোশাক খাতের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা। কারণ, বাজারে প্রতিযোগিতা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সেটা তারা সবচেয়ে ভালো জানেন।
বাংলাদেশের বেসরকারি খাত দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। দেশের প্রায় ৯০ ভাগ কর্মসংস্থান এই খাত থেকে আসে। সরকারের উচিত তাদের আস্থা অর্জন করা এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে সংকট সমাধানে কাজ করা। দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়া দরকার। সরকারের উচিত বেসরকারি শিল্পপতিদের সঙ্গে অবিলম্বে বৈঠক করা এবং তাদের মতামত এবং পরামর্শকে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা।
লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক
ইমেইল : [email protected]
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta